ব্রেকিংঃ

শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উঠছে সংশোধিত শ্রম আইন

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা বহুল আলোচিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের সংশোধনী শিগগিরই মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হতে যাচ্ছে। ঈদের আগে আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটি উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা পাশ হওয়ার জন্য সংসদে উত্থাপন হবে। অর্থাত্ আগামী সংসদ অধিবেশনেই এটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে একাধিক আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ শ্রম আইনের সংশোধনী পাশ হবে বলে জানিয়েছিলেন।
২০১৬ সালে সরকার নতুন শ্রম আইন পাশ করে। তবে এটি শ্রমিকবান্ধব হয়নি বলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলোচনা সমালোচনা করতে থাকে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিশাল সংখ্যক শ্রমিক হতাহতের পর নতুন করে এটি আলোচনায় আসে। বিশেষত শ্রমিকের সংঘবন্ধ হওয়া বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়টি আলোচিত হয়। সমালোচনার মুখে ওই বছরই সরকার আইনটিতে বেশকিছু সংশোধন আনে। এর পর কারখানার ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে গতি আসলেও শ্রমিকের হয়রানি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমেনি বলে অভিযোগ উঠে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণ থেকে আপত্তি তোলা হয়। একই সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইপিজেড এলাকার কারখানার শ্রমমানকে তাদের পরিদর্শনের আওতায় আনাসহ বেশকিছু ইস্যু সামনে আসে।
গত বছর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনফারেন্সে (আইএলসি) এ বিষয়ে অগ্রগতির অর্জনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশকে ‘স্পেশাল প্যারাগ্রাফ’ এর আওতায় আনা হয়। এর পর শ্রম আইনের সংশোধনীর বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গত মে মাসে তা চূড়ান্ত করা হয়। এটি চূড়ান্ত করার পর ওই মাসেই অনুষ্ঠিত চলতি বছরের আইএলসি এ অগ্রগতি তুলে ধরে সরকার। সেই সঙ্গে তা আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ পাশ হবে বলেও সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হয়। ফলে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয় আইএলসি।
যে সব সংশোধনী আসছে শ্রম আইনে
বর্তমানে যে কোন কারখানার শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে কমপক্ষে ত্রিশ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত সম্মতি প্রয়োজন হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় সম্মতি দেওয়ার ফলে কারখানা মালিকের পক্ষে ওই শ্রমিকদের চিহ্নিত করা সহজ হয়। ফলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আগেই তাদের চাকরিচ্যুতি কিংবা অন্যান্য হয়রানির মুখে পড়তে হয়। সংশোধনী অনুযায়ী, ত্রিশ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতির ভিত্তিতেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। এছাড়া এটি সহজ করার বিষয়টিও আসছে সংশোধনীতে। বর্তমানে শ্রম সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানির শেষ নেই।
এ ধরণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ১৮০ কার্যদিবস বা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তিকে বাধ্যবাধকতায় আনতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। বর্তমান আইনে ট্রেড ইউনিয়নগুলো বিদেশী অর্থ পেলেও আইনে এ বিষয়ে কিছুই বলা নেই। শ্রমিক নেতাদের বিদেশী অর্থ আনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হচ্ছে। সংশোধনীর প্রস্তাবে শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এ ধরণের অর্থ আনা যাবে। এছাড়া ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেটরি কমিটি গঠন করা যাবে। অন্যদিকে ডিআইএফই’র পরিদর্শকরাও সেখানে শ্রম ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে পারবেন। এর বাইরে আরো কয়েকটি বিষয় রয়েছে সংশোধনীতে।
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।