ব্রেকিংঃ

সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ ফল করতে – সালাহউদ্দিন রিফাত

 বিসিএসে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ছিটকে পড়েন প্রিলিমিনারি থেকে। ৪০তম বিসিএসের প্রিলির প্রস্তুতি নিয়ে বিশেষ ধারাবাহিকের শেষ পর্বে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। লিখেছেন ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম মো. সালাহ্উদ্দিন রিফাত

 

বিসিএসের সিলেবাসে সাধারণ জ্ঞানের (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) জন্য নির্ধারিত নম্বর যেমন তুলনামূলক বেশি, তেমনি এ বিষয়ে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে (বিশেষভাবে গণিত ও ইংরেজি) কম সময় ব্যয় করে বেশি নম্বর তোলা সম্ভব। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ গণিত অথবা ইংরেজি কিংবা দুটিতেই দুর্বল থাকে। তাদের জন্য সাধারণ জ্ঞান অংশটি হতে পারে বড় হাতিয়ার।

সিলেবাস ও বিগত প্রশ্ন

২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। এ দুটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভূগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশেও কাজে লাগে। প্রস্তুতির জন্য প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা হয়ে যায়। বিশাল সিলেবাসের সব টপিক পড়া খুবই কঠিন। তাই বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ টপিক পড়তে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলোই নির্দেশ করবে কোন কোন টপিক গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি, কৃষিজ সম্পদ, অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য, সংবিধান, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, জাতীয় অর্জন প্রভৃতি বিষয় আছে সিলেবাসে। জাতীয় বিষয়াবলি থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রশ্ন থাকে। এ অংশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালোভাবে জানতে হবে। দেশ বিভাগের পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সময়ে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি জেনে রাখতে হবে। কৃষিজ সম্পদ, অর্থনীতি ও শিল্পবাণিজ্য অংশের জন্য অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮, চলতি অর্থবছরের বাজেট, বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প, আর্থিক পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় দেখতে হবে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ (রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ইত্যাদি) পড়তে হবে। এ ছাড়া সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী থেকে প্রায় প্রতিটি বিসিএসে প্রশ্ন থাকে।

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, জাতীয় অর্জন, পুরস্কার, দর্শনীয় স্থান, ইউনেসকো স্বীকৃত স্থান ও সাম্প্রতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া প্রাচীন জনপদ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, নৃগোষ্ঠী, পার্বত্য জেলা, আবহাওয়া ও জলবায়ু থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির টপিক পাঁচটি, যার প্রতিটি অংশ থেকে সমানসংখ্যক প্রশ্ন থাকে। পরিবেশগত ইস্যুতে বিভিন্ন সম্মেলন ও চুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ দিবস, আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান (জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি), আন্তর্জাতিক জোট, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, বিরোধপূর্ণ অঞ্চল, বিশ্বযুদ্ধ, বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে থাকা রাষ্ট্রগুলো, মহাসাগর ও পার্শ্ববর্তী দেশ, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ (চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মিয়ানমার প্রভৃতি) ইত্যাদি ভালোভাবে পড়তে হবে।

সহায়ক বই ও অন্যান্য

ক। নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পৌরনীতি।

খ। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন (দ্বিতীয় পত্র)।

গ। দৈনিক পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক কলাম।

ঘ।সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর প্রকাশিত মাসিক প্রকাশনা।

ঙ। বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক মৌলিক বই।

চ। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনা প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত বই ও সাময়িকী।

ছ।ইন্টারনেট, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট।

জ। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রকাশিত সাধারণ জ্ঞানের বই।

ঝ।বিবিসি বাংলা ও টিভি সংবাদ।

ভালো করার টেকনিক

ব্যবসায় অনুষদের ছাত্র হওয়ায় বিসিএস প্রস্তুতির আগে আমার কখনোই সেভাবে সাধারণ জ্ঞানের চর্চা করা হয়নি। তাই এ বিষয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। শুরুতেই বিসিএসের সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করি। এর ফলে কী কী বিষয় পড়তে হবে, সে বিষয়ে ধারণা পেয়ে যাই। সুপরিকল্পিতভাবে নিয়মিত চর্চা করলে এ বিষয়ে খুব সহজেই ভালো করা যাবে। প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো গ্রাফ ও চিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে ধারণাগুলো স্পষ্ট হয় এবং সহজে মনে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থান, অঞ্চল, প্রণালী, মহাদেশীয় সীমারেখা, বিভিন্ন দেশের সীমান্ত মানচিত্রে মার্ক করে পড়লে দ্রুত আত্মস্থ করা সম্ভব হয়। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিলে প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।

বিসিএসে ভালো করার জন্য আপনি কতটা মেধাবী তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কতটা পরিশ্রমী। তবে পরিশ্রম হতে হবে পরিকল্পিত। আত্মবিশ্বাস রাখুন। আপনি স্বপ্ন পূরণের খুব কাছেই আছেন। সবার জন্য শুভ কামনা।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।