ব্রেকিংঃ

আ’লীগের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে যা আছে

 জনতার বাণী ডেক্স।।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সকাল ১০টায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্বাচনী ইশতেহার  প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’স্লোগান সংবলিত বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিকে সামনে রেখেই ২১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে করা বিশেষ অঙ্গীকারগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

১. ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ

২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা

৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ

৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ

৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা

৬. সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল

৭. মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন

৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা

৯. দারিদ্র্য নির্মূল

১০. সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি

১১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি

১২. সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা

১৩. সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার

১৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা

১৫. আধুনিক কৃষি-ব্যবস্থার লক্ষে যান্ত্রিকীকরণ

১৬. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন

১৭. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা

১৮. ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্রসম্পদের উন্নয়ন

১৯. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা

২০. প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ

২১. টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে রয়েছে সাতটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ইশতেহারের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে পটভূমি, তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য ও আগামী মেয়াদের জন্য পরিকল্পনা, চতুর্থ অধ্যায়ে দেশের অর্থনীতির চিত্র, পঞ্চম অধ্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ দিকদর্শন এবং সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান। এসব অধ্যায়ের মধ্যে আবার উপ-অধ্যায়ে ভাগ করে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়।

এবারের ইশতেহারের মূল বিষয় তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার করেছে, এর প্রথমেই আছে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা দেয়া । এরপরই থাকছে যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ।

ইশতেহারে কি কি প্রতিশ্রুতি দিলো আ.লীগ

প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সেবা পৌঁছে দেয়া হবে

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্য আয়ের দেশ। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সেবা পৌঁছে দেয়া হবে।  মাথা পিছু আয় ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারে উন্নীত হবে। এক বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উপরে সব নাগরিককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হবে। ২০২০ সারের মধ্যে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবো। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেব। আগামী ৫ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।  দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। কৃষি উপকরণের উপর ভর্তুকি আরও বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে, ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পাশাপাশি শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করবে

ক্ষমতায় গেলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়াবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার ( ১৮ ডিসেম্বর )  সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে ইশতেহার প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে সরকারের ইশতেহার তুলে ধরেন।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে।

ইশতেহারে প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ তরুণদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সরকার ক্ষমতায় গেলে তরুণরা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।

২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে। তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রণয়ন করা হবে একটি যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’।

এ ছাড়াও তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে বলে ইশতেহারে জানানো হয়। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’ যেখানে থাকবে বিভিন্ন ইনডোর গেমসের সুবিধা, মিনি সিনেমা হল, লাইব্রেরি, মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্নার, মিনি থিয়েটার ইত্যাদি।

তাদের স্বল্প খরচে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে ‘ইয়ুথ প্ল্যান’ চালু করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়াও তরুণদের মাদকের ভয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করা ও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে।

বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস

নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রস্তাবিত ৩১ তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

মঙ্গলবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে দলের ইশতেহার পড়ে শোনান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ক্ষমতায় গেলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রস্তাবিত ৩১ তলা ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও পেশাগত দায়িত্ব পালনে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণে প্রচলিত উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ নেয়া আশ্বাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বিতরণে বৈষম্যমূলক নীতি, দলীয়করণ বন্ধ এবং সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে তার বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হবে। গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো আইনের অপপ্রয়োগ হবে না।

গণমাধ্যমকে স্বাধীন করতে আওয়ামী সরকারের নেয়া উদ্যোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইতোমধ্যে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের চেতনায় দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের সকল শাখা ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে। ৩৩টি টেলিভিশন, ১৬টি এফএম রেডিও, ১৭টি কমিউনিটি রেডিওসহ অসংখ্য সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে দেশে তথ্যের অবাধ চলাচল অব্যাহত আছে।

সংবাদমাধ্যমের সরকারের অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেক সাংবাদিককে আর্থিক ও চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। দেশে সাংবাদিকতা শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানো হয়েছে। পেশায় নিয়োজিত সাংবাদিকদের সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমার পাশাপাশি মাস্টার্স ডিগ্রি ও জাতীয় গণমাধ্যম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। পিআইবি-তে অনলাইন ট্রেনিং কোর্স চালু করায় ঘরে বসে শত শত সাংবাদিক সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে।

কোরআনসুন্নাহবিরোধী কোনও আইন করা হবে না

কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনও আইন করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার ( ১৮ ডিসেম্বর ) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দলের ইশতেহার ঘোষণা  করার সময় তিনি বলেন, দেশের জন্য কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোন আইন করা হবে না। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমুলক সকল প্রকার আইন ও ব্যবস্থার অবসান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মিথ্যা তথ্য প্রচার ও অনাকাঙ্ক্ষিত গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে সামাজিক দায়বদ্ধ সমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। নির্বাচনী ইশতেহারে জনবান্ধব আইন-শৃঙখলা বাহিনী গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, দক্ষ, সেবামুখী ও জবাদিহিতামূলক প্রশাসন, মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ,  দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করা হবে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা এসময় বলেন,  প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন নিয়মিত রোজগারের নিশ্চয়তা থাকবে।  কৃষি উপকরণের উপর ভর্তুকি অব্যাহতির পাশাপাশি বাড়ানো হবে।  ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চয়তা করা হবে।  ৫ বছরে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে। ইশতেহারে তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পাশাপাশি শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

প্রাণিসম্পদ খাত আরও বৃদ্ধি করা হবে

দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন মেটানো, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগামী মেয়াদের জন্য আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে প্রাণিসম্পদ খাত আরও বৃদ্ধি করা হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।  ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে হাঁস-মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনী ইশতেহার থেকে জানা যায়, বিপুল জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ খাতে জড়িত আছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১০ বছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী মেয়াদেও সরকার এ খাতে বড় অবদান রাখতে চায়।

১০ বছরে প্রাণিসম্পদে সরকারের সাফল্য ও অর্জনের মধ্যে রয়েছে:

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা উৎপাদন, বিতরণ ও প্রয়োগ করে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন যথাক্রমে ২৯.৫০ লাখ মেট্রিক টন, ১৯.৯০ লাখ মেট্রিক টন ও ৬০৭.৮৫ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯৪.০৬ লাখ মেট্রিক টন, ৭২.৬০ লাখ মেট্রিক টন ও ১,৫৫২.০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

মৎস্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। বিগত ৯ বছরে মাছের উৎপাদন ২৭.০১ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৪১.৩৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। হাঁস-মুরগি, গাভী পালন ও দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণ ও কর মওকুফ সুবিধা দিয়ে এসবের লাভজনক বাণিজ্যিক প্রসারে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ইশতেহারে বলা হয়, ২০২৩ সালের মধ্যে হাঁস-মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাণী খাদ্য, গবাদি পশুর ঔষধপত্র ও চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস ও সহজপ্রাপ্য করার ওপর জোর দেয়া হবে। সেই সঙ্গে এগুলোর জন্য যাতে ভালো দাম পাওয়া যায়, তার জন্য বাজার-ব্যবস্থা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার আরও উন্নয়ন করা হবে।

ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি-সহায়তা বৃদ্ধি করে তা অব্যাহত রাখা হবে। পুকুরে মাছ চাষ ও যেখানে সব ধানক্ষেতে মাছ চাষের আরও প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা, পুঁজিসংস্থান ও সুলভে বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।

মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ব্যাপক মানোন্নয়ন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে মাছ চাষের ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি সাধন ও ধৃত মাছের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্বিক কৃষি খাতে প্রাণিসম্পদ উপখাতের অবদান ১৪.৩১ শতাংশ।  এটাকে আরও বৃদ্ধি করা হবে।

বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। আগামী ৫ বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ শ্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি বলেন,  দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, মেগা প্রকল্প সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষ্যম্য হ্রাস করা হবে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি জোরদার অব্যাহত থাকবে। দারিদ্যের হার শূন্যের কোটায় কোটায় নামবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ হারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বহার হতে ধারণা করা যায়, ২০২৫-৩০ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্রয়ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আজ ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে।

‘মাথাপিছু আয় বর্তমানে উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে, যা ২০০৬ সালে ছিল ৪২৭ ডলার।  ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি হয়েছে ২২ লাখ কোটি টাকা, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় এখন প্রায় পাঁচ গুণ।’

তিনি আরও বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট প্রাক্কলিত হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি আশানুরূপভাবে জিডিপির ৫ শতাংশে সীমিত রাখা হয়েছে গত ১০ বছর। অতীতের তুলনায় বিনিয়োগ বেড়েছে, বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৩১.০ শতাংশ, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ২৫.৮ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছে জিডিপির ৭.৬ শতাংশ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪.১৩ শতাংশ।

২০৩০ সালে মাথাপিছু আয় হাজার ৪৭৯ ডলার ছাড়াবে

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ মার্কিন ডলারের বেশি। বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ( ১৮ ডিসেম্বর ) রাজধানীর একটি হোটেলে সকালে দলের ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি এ কথা বলেন। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ শ্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৫ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামবে।

তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ হারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।  সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বহার হতে ধারণা করা যায়, ২০২৫-৩০ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্রয়ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আজ ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি আশানুরূপভাবে জিডিপির ৫ শতাংশে সীমিত রাখা হয়েছে গত ১০ বছর। অতীতের তুলনায় বিনিয়োগ বেড়েছে, বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৩১.০ শতাংশ, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ২৫.৮ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছে জিডিপির ৭.৬ শতাংশ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪.১৩ শতাংশ।

ঋণ জালিয়াতিতে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে

অনিয়ম-দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি আর নানা জাল-জালিয়াতির কারণে বর্তমান আমওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে সর্বাধিক সমালোচিত হয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। তাই আগামীতে ক্ষমতায় আসলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন, খেলাপি ঋণ কমানোসহ ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় ইশতেহার প্রকাশ কালে এ কথা জানান তিনি।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। সেই সঙ্গে ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্ত গত নয় বছরে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, এননটেক্সসহ নানা বড় বড় অনিয়ম, জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে; কিন্তু কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা জোরপূর্বক পরিবর্তন হয়েছে। সব ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

এদিকে সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিগত এক দশকে ব্যাংক থেকে সাড়ে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি ১৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব অর্থ খোয়া গেছে।

সিপিডি জানায়, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারসহ ব্যাংকারদের পেশাদারিত্বের অভাবে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যার মূল কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক দলের নেতাদের যুক্ত করা, পরিচালকের দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সবশেষে ঋণ দেয়ায় সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।

আওয়ামী লীগ ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ এবং দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নের টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে। বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত জুনে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, বা ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এই বোঝা দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। ব্যাংকিং খাতের এ দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

অভ্যন্তরীণআন্তর্জাতিক রুটে বুলেট ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে পরবর্তী ৫ বছরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে দলের ইশতেহার পড়ে শোনান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ক্ষমতায় গেলে যোগাযোগ খাতে তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলো ইশতেহার তুলে ধরেন।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন চালু হবে। এই ট্রেনে মাত্র এক ঘণ্টায় চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে। চট্টগ্রামের পর পর্যায়ক্রমে বুলেট ট্রেন সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এ ছড়া মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে।

বিমান পরিবহন খাতের বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে- রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

এবছরের আলোচিত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, নিরাপদ সড়কের জন্য লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ফিটনেসবিহীন গাড়িকে পারমিট না দেয়া, চালকদের লাইসেন্স প্রদানে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা, সড়ক ও মহাসড়কগুলোকে ক্রমে সিসিটিভি-র আওতায় আনা এবং জনসাধারণকে সচেতন করা প্রভৃতি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে।

ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক জোটের যোগাযোগ-ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার আশ্বাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আসবে ফাইভজি, কমানো হবে ইন্টারনেটের খরচ

ক্ষমতায় গেলে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করবে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে ইশতেহার প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে দলের ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফাইভ-জি চালু করা হবে। এ ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিএক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটি-সহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এবং সাবমেরিন ক্যাবল-৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পরবর্তী সময় সরকার গঠন করলে ই-পাসপোর্ট, ই-ভিসা চালু, শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ ও আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। এ ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রফতানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এ ছাড়াও শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।