ব্রেকিংঃ

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে দেব : প্রধানমন্ত্রী

জনতার বানী ডেক্স।।

সিলেটে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আরেকবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে দেব, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি।

আজ শনিবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় এই কথা বলেন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি হজরত শাহজালাল (র.), হজরত শাহপরান (র.) ও গাজী বুরহান উদ্দিনের (র.) মাজার জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা।

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ হিসেবে পরিচিত করেছে। গ্যাসবিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল বিএনপি-জামায়াত।

শেখ হাসিনা বলেন, ‌‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারই রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান। আমরা মামলা দেইনি। দীর্ঘ ১০ বছরের বিচারের পর তাঁর সাজা হয়েছে।’

‘আর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দণ্ডিত আসামি লন্ডনে বসে বসে নাটাই ঘোরায়। বিদেশের মাটিতে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবার যদি ক্ষমতায় যাই, তাহলে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ধরে নিয়ে এসে সাজা কার্যকর করব। বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিলেট বিভাগে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালব এই পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। স্কুল-কলেজ, ব্রিজ, রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে তৈরি করা হচ্ছে। সিলেট বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি।‌ প্রত্যেক জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকারি-বেসরকারিভাবে আমরা সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এখন লন্ডন থেকে সরাসরি বিমান সিলেটে নামছে। বাংলাদেশ বিমান করুণদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সারা দেশে ৫৬০টি মসজিদ কাম ইসলামিক সেন্টার আমরা করে দিচ্ছি। সৌদি সরকার এখানে সহায়তা করছে। কওমি মাদ্রাসার সনদের মান দিয়েছি, দেশে-বিদেশে  তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বিএনপি সরকারের মন্ত্রী একচেটিয়া ব্যবসা করত, সেই মনোপলি ভেঙে দিয়েছি। সবার হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে।

নৌকা মানুষের জীবনের বন্ধু। হজরত নূহ (আ.)-এর আমলে নৌকায় ভর করে মানুষ মুক্তি পেয়েছিল। তেমনি নৌকায় ভোট দিলে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়। আমরা সরকার গঠন করে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছি। কোনো ঘর আর অন্ধকার থাকবে না।‌’ বলছিলেন শেখ হাসিনা।

রেল যোগাযোগে উন্নয়নের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‌একটি বাড়ি একটি খামারের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করেছি, দেশের প্রতিটি ইঞ্চি যেন চাষাবাদের আওতায় আসে। হাওড় অঞ্চলের মানুষের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সিলেটের প্রত্যেকটি নদীর ড্রেজিং করার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। সিলেটের অনেক নদীর নাব্যতার কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‌‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, আমরা মাথা উঁচু করে চলব। পদ্মা সেতু নিয়ে আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, আমরা নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করব। আল্লাহর রহমতে সেই পদ্মা সেতু করতে সক্ষম হয়েছি।

বিএনপি সরকার মানে হত্যা, গুম, জঙ্গিবাদের রাজত্ব। দেশকে বিশ্বের নিকট ভিক্ষুকদের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এখন বাংলাদেশ মানে উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও মর্যাদা।‌’

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকের নির্বাচনে নমিনেশন ব্যবসা করেছে তারা। একেকটা সিটে কয়েকজনকে প্রার্থী দিয়েছে, যে বেশি টাকা দিয়েছে তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে দলীয় ও মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় তিনি মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা লাঙ্গল মার্কায় ভোট দেন, কোনো সমস্যা নেই, সব লাঙ্গল নৌকায় নিয়ে আসব।’

গান গেয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত

‘কোন মেস্ত্ররি নাও বানাইল কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে বঙ্গবন্ধুর নৌকায়’ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত গান ‘কোন মেস্ত্ররি নাও বানাইল কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নাও’ গানের সুরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিকেল সোয়া ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সভামঞ্চে পৌঁছান তখন এ গান গেয়ে শোনান তিনি।

সার্কিট হাউজ থেকে শেখ হাসিনা যখন সভাস্থলে পৌঁছান তখন মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ সময় ‘জননেত্রীর আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ স্লোগান দিতে থাকেন সমাবেশে আগত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এর পর পরই এই গানের সুর তোলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি হজরত শাহজালাল (র.), হজরত শাহপরান (র.) ও সিলেটের প্রথম মুসলিম গাজী বুরহান উদ্দিনের (র.) মাজার জিয়ারত করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা মাজার জিয়ারত শেষে জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের জন্য নগরীর সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। এরপর সার্কিট হাউজ থেকে সভাস্থলে পৌঁছান। জনসভা অবশ্য দুপুর ২টায় শুরু হয়।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে সেই জনসভা শুরু হয়। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।