ব্রেকিংঃ

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনা প্রধানের মিয়ানমার সফর!!আলোচনায় গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

জনতার বাণী ডেস্ক
আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন। একই সঙ্গে জোর দেবেন দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে। আলোচনা হবে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে যশোর সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর পাঁচ ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান সেনাপ্রধান। সমতার ভিত্তিতে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের লক্ষ্য নিয়েই সরকারের পলিসি বাস্তবায়নে সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সফরে আশার পালে নতুন হাওয়া লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চীন সফরে সেনাবাহিনী প্রধান চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উয়েই ফেং, পিপলস্ লিবারেশন আর্মি গ্রাউন্ড ফোর্স এর কমান্ডার জেনারেল হান উয়েগো, চীন অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কর্ণধার ও চীনের ডিফেন্স ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে জ্বলন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুটিই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে জানিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের সহায়ক হিসেবেও কাজ করে সেনাবাহিনী। সরকারের যে পলিসি থাকে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও আমাদের কাজ। তাই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও আসন্ন সফরে কথা হবে।’
সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সে অনুযায়ী সেনাবাহিনীও সব দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। এজন্য প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের চুক্তি হয়। এবং তা দেশের চাহিদার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।’
এদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই যশোর সেনানিবাসের সিগন্যাল কোরের প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনাসদস্যদের সালাম গ্রহণ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, দেশসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য রেজিমেন্টাল কালার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ১২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৩৬ এডি রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ১ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন আজ কালার প্যারেডে অংশগ্রহণ করে। তারা প্রধান অতিথির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন
যশোর সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর পাঁচ ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অত্যাধুনিক ও বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। আর কোনো প্রশিক্ষণই ফলপ্রসূ হবে না যদি আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি থাকে। প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ‘বেসিক সোলডারিং’-এর উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন প্রশিক্ষণই সর্বোচ্চ কল্যাণ।
ভবিষ্যতেও মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষা তথা জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।
কোর অব সিগন্যালস-এর ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে আজ প্রথমবারের মতো কোনো সিগন্যাল ইউনিট রেজিমেন্টাল কালার অর্জন করল- যা এক সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন তথা কোর অব সিগন্যালস-এর ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করল মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সিগন্যাল ইউনিট সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন।

১৯৭১ সালে যাত্রা শুরুর পর হতে ‘অপারেশন আলোর সন্ধানে’ এবং ‘অপারেশন নবযাত্রাসহ অর্পিত সকল দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করেছে। এই ইউনিট বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে সকলপ্রকার কারিগরি সহায়তা সফলতার সঙ্গে প্রদান করে- যা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও এক সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন ফরমেশন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় ৪৬টি ট্রফি অর্জনে সক্ষম হয়।
রেজিমেন্টাল কালার পবিত্র আমানত
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি যেকোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও পবিত্র আমানত। আজ সেই রেজিমেন্টাল কালার এই ৫টি ইউনিটের হাতে তুলে দেয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় ইউনটসমূহকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সবসময় সচেষ্ট থাকবেন।

বাংলাদেশ-সৌদি আরবের আন্ত:রাষ্ট্রীয় চুক্তি
সেনাপ্রধান কথা বলেন বাংলাদেশ ও সৌদী আরবের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির বিষয়েও। তিনি বলেন, ‘এ চুক্তির মাধ্যমে মাইন অপসারণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ থেকে সেনাসদস্য মোতায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৭শ’ জনবলের দুটি ডি মাইনিং ব্যাটালিয়ন এবং বিএমসি সদর দপ্তরের সঙ্গে ১৮ জন জনবল সৌদী আরবের জাযান এবং নাজরান এলাকায় নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হতে এমওইউ সৌদী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে-যা অনুমোদন হওয়ার পর চূড়ান্তভাবে কার্যক্রম শুরু হবে।’
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর আরডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, যশোর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সরোয়ার হাসান ও সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।