ব্রেকিংঃ

নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোলা জেলা জামায়াতের আমির চাকুরি থেকে বহিষ্কার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর জাল, ঘুষ নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ সহ নানা অভিযোগে জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির ও চরফ্যাসন ওজুফিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলামা মোস্তফা কামালকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করেছে ম্যানেজিং কমিটি। অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তফা কামাল জেলা শিক্ষা অফিসার জাকিরুল হকের স্বাক্ষর জাল করে বেতন উত্তোলন, ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অফিস সহকারি পদে আবদুস শহীদ নামে এক ব্যাক্তিতে নিয়োগ, ৩ বছর ধরে কমিটি না করে ভূয়া কমিটি রেজুলেশন করে অবৈধভাবে দুই জন শিক্ষক নিয়োগ, মাদ্রাসায় ঠিক মত উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন কারনে তাকে বহিস্কার করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কারনে জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির ও চরফ্যাসন ওজুফিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলামা মোস্তফা কামালের বেতন উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকার সময় তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার জাকিরুল হক ও অফিস সহকারিরসই জাল করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো: জাকিরুল হক ১৮/১/১৮ তারিখে অভিযোগের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য ওজুফিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বরারবর পত্র প্রেরন করেন। পত্রে ২৮/০১/১৮ তারিখের মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসে এসে আত্মপক্ষ সর্মথনের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু মোস্তফা কামাল কোন জবাব প্রদান করেননি। এর পূর্বে প্রায় তিন বছর ওজুফিয়া মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি ছিল না। কমিটি না থাকাকালীন সময়ে আবদুস শহিদ নামে এক ব্যাক্তিকে অফিস সহকারি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এই বিষয়ে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে এবং ভূয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শোকজ করা হলেও শোকজের জবাব দেননি তিনি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও জমিদাতা সদস্য আবদুস সালাম জমাদ্দার ২০/১২/১৭ তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসার ও মাদরাসা পরির্দশক বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে মাও: মোস্তফা কামালের নামে অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন মাও: মোস্তফা কামাল হাফেজ আহমদ নামে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে ১৬৫০০, প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন থেকে ১লক্ষ, প্রভাষক মাহবুবেব কাছ থেকে ৫০০০০, প্রভাষক বাহাউদ্দিনের কাছ খেকে ৬৫০০০, প্রভাষক আনোয়ারের কাছ থেকে ৫০০০০, সাবেক কম্পিউটার শিক্ষক মোসলেহ উদ্দিনের কাছ থেকে ৯০০০০ হাজার টাকা সহ বিভিন্ন খাত থেকে মোট ২২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টাকা আত্মসাৎ, অবৈধভাবে নিয়োগসহ স্বাক্ষর জাল অন্যন্য কারনে তার অপসারন দাবি করেন।
জামায়াতে ইসলামীর সূত্রে যানা যায় , জেলা জামায়েত ইসলামীর বর্তমান আমির মাও: মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে পূর্বেও নানা অভিযোগ ছিলো। সে সময় তাকে জামায়াত ইসলামী থেকে তার সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছিল। এবার মাদরাসা থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে তিনি তার বেতন বন্ধ ও বহিষ্কারকে রাজনৈতিক কারন উল্লেখ করে জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে মাসিক বেতনের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো: জাকিরুল হক জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন উত্তোলনের জন্য মোস্তফা কামাল আমার স্বাক্ষর জাল করেছেন এই অভিযোগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে ডাকা হলেও তিনি আসেননি এবং কোন উত্তর প্রদান করেননি। এর আগে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ এবং ঘুষ গ্রহন সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত কালিন সময়ে তদন্তকারি দলকে সহায়তা করার জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়ার হলেও তিনি তা করেননি। পরে ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও চরফ্যাসন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মান্নান জানান, মাওলানা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের সই জাল করে বেতন তোলার অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসায় তিন বছর কমিটি না থাকার সময় আবদুস শহিদকে নিয়োগ প্রদান করেছে। আবদুস শহিদের নিয়োগ প্রদানের সময় তিনি ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়া ওই সময় কমিটি না থাকলে তিনি ভুয়া রেজুলেশন করে ভুয়া কমিটি বানিয়ে সেই কমিটির মাধ্যমে আবদুস শহিদকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য একাধিকবার নোটিশ করা হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। তাই সকলের সিদ্ধান্তক্রমে গত ২০/৫/২০১৮ তারিখে মাওলানা মোস্তফা কামালকে বহিস্কার করা হয়। রাজনৈতিক কারনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, চরফ্যাসনে এমন অনেক শিক্ষক আছে যারা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত, কিন্তু তাদের কাউকেই তো বহিস্কার বা চাকুরিচ্যুৎ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওজুফিয়ার আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও জেলা জামায়েতে ইসলামির আমির মাও: মোস্তফা কামাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা কোন অভিযোগের সত্যতা নেই। আমার মুল অপরাধ আমি জামায়েত ইসলামির জেলা আমির। আমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল, এমপিওভূক্তিতে অনিয়ম সহ যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তার কোন প্রমান নেই। আমার বরাবর কোন চিঠি প্রেরন করা হয়নি। মাদ্রাসায় না যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, মাদ্রাসায় গেলে আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এর আগে রাজনৈতিক কারনে আমার বড় ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারনে এখন আমি মাদ্রাসায় যাচ্ছি না।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।