ব্রেকিংঃ

মনপুরায় নৌকায় ভোট দেওয়ায় চাল পায়নি দুই শতধিক ভিজিডি কাডধারী পরিবার।।

এইচ এম জাকির, ভোলা ॥ শুধুমাত্র নৌকার সমর্থন করায় নির্বাচিত আনারস মার্কার বিদ্রোহী প্রার্থীর চেয়ারম্যান ধক ভিজিডি কার্ডধারী পরিবারের পাঁচ মাসের চাল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কেড়ে নেয়া হয়েছে ওই সকল পরিবার গুলোর কাছ থেকে ভিজিডির কার্ডও। বদলে ফেলা হয়েছে পরিষদের চাল প্রত্যাশিদের নামের মাষ্টারুলও। ভুক্তভোগীরা জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকটি কার্ড ফিরত নিতেই দেখতে পায় ইউপি সচিবের সাক্ষরে ওই সকল কার্ডে পাঁচ মাসের চালও দেয়া হয়ে গেছে। এমনকি চেয়ারম্যান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনওর সাক্ষর ছাড়াই অনুমোদন বিহীন ভুয়া কার্ডেও ইউপি সচিবের সাক্ষরেই দেখানো হয়েছে চাল বিতরণ। কে নিয়েছে এই চাল ? মাসের পর মাস কার্ডধারী পরিবার গুলো চাল না পেলেও তাদের প্রাপ্প চাল কোথায় গেলো এমন প্রশ্নে কোন ধরনের সদউত্তর নেই পরিষদের চেয়াম্যান, সচিব এমনকি উপজেলা প্রশাসনের কাছেও।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতায় ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর দুস্থ ও অসহায় পরিবার গুলোর মাঝে মাসিক ৩০ কেজি হারে বিনামূল্যে চাল বিতরণের সিন্ধান্ত নেয় সরকার। তারই ধারবাহিকতায় ২০২১ ও ২০২২ চক্র (পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী) মনপুরা উপজেলার ২নং হাজিরহাট ইউনিয়নের প্রায় ৮০৮টি পরিবারকে ভিজিডি কার্ডের আওতায় আনা হয়। এমনকি জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ মাসের চালও ওই সকল কার্ডধারী পরিবার গুলোর মাঝে বন্ঠন করা হয়। অথচ ইউনিয়নটিতে নির্বাচিত নতুন চেয়াম্যান দায়িত্বভার গ্রহন করার পর অধিকাংশরা চাল পেলেও বঞ্চিত রয়েছে কার্ডধারী দুই শতাধিক পরিবার। অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র নৌকায় ভোট দেয়ায় নির্বাচিত বিদ্রোহী প্রার্থীর চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন হাওলাদার ওই সকল পরিবার গুলোকে বঞ্চিত করেছেন চাল পাওয়া থেকে। এমনকি কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের ভিজিডি কার্ডও। বদলে ফেলা হয়েছে পরিষদের চাল প্রত্যাশিদের নামের মাষ্টারুলও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজিরহাট ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ভিজিডি কার্ডধারী একাধিক পরিবার বঞ্চিত রয়েছে তাদের প্রাপ্প চাল পাওয়া থেকে। ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দাসেরহাট গ্রামের বাসিন্দা শঅহেদ আলীর স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, গেলো চেয়ারম্যান দিপক চৌধুরীর সময়ে আমাদের পরিবারকে একটি ভিজিডি কার্ড দেয়। ওই কার্ডে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঠিক ভাবেই আমরা চাল পেয়েছি। কিন্তু নতুন চেয়াম্যান আসার পর থেকে আমরা প্রায় ৬ মাসের চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডেরই বহু মানুষই এই কার্ডের মাধ্যমে চাল পেলেও আমাদেরকে চাল দেয়নি। এমনকি চাল দেয়ার কথা বলে পরিষদে নিয়ে আমাদের অনেকেরই কার্ড কেড়ে নিয়েছে।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সোনার চর গ্রামের বাসিন্দা ইমাম হোসেনের স্ত্রী শিরিনা আক্তার বলেন, আমাদের কার্ডে সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনওর সাক্ষর রয়েছে। এই কার্ডে কোন ধরনের ত্রুটি নেই। আগের চেয়ারম্যান এই কার্ডে পাঁচ মাসের চালও দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানের চেয়ারম্যান এই কার্ড ভুয়া বলে আমাদেরকে টানা ৬ মাসের চাল না দিয়ে উল্টো আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। একই কথা বলে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের বাসিন্দা জাফর আহম্মদের স্ত্রী পারভিন আক্তার বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের পর থেকেই আমরা চালের পরিষদে কয়েকবার গিয়েছি। আজ কাল করে চাল না দিয়ে আমাদেকে শুধু ঘুরিয়ে এখন আমাদের অনেকের কার্ডের নাকি সমস্যা আছে এই বলে আমাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক কার্ড ছিনিয়ে রেখে দিয়েছেন পরিষদের সচিব। অথচ আমাদের কার্ড যদি ভুয়া কিংবা কোন ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আগের চেয়ারম্যান কিভাবে এ কার্ডে পাঁচ মাসের চাল দিয়েছে। আসলে সমস্যা কিছুই না, আমরা আনারস প্রতিকের বর্তমান চেয়ারম্যানের ভোটা না করে নৌকার ভোট করেছি বলেই আমাদের উপর এখন এ ধরনের অবিচার।
শুধু শারমিন, শিরিনা ও পারভিন আক্তারই নন, তাদের মতো ৪নং ওয়ার্ডের কুলসুম, ১নং ওয়ার্ডের জোসনা রাণী দাস, ৭নং ওয়ার্ডের আকলিমা আক্তার, ৮নং ওয়ার্ডের ইয়াসনুর বেগম, ৯নং ওডার্ডের বিবি হোসনেয়ারা, ৮নং ওয়ার্ডের হাসিনা বেগম, ৯নং ওয়ার্ডের জিন্নাতারাসহ ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক ভিজিডি কার্ডধারী পরিবার বঞ্চিত হয়েছে চাল পাওয়া থেকে। এমনকি প্রত্যেক পরিবারকে চাল দেয়ার কথা বলে পরিষদে নিয়ে তাদের ভিজিডি কার্ড জোড়পূর্বক আটকে রেখেছে।
শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগীরা জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকটি কার্ড ফিরত নিতেই দেখতে পায় ইউপি সচিবের সাক্ষরে ওই সকল কার্ডে পাঁচ মাসের চালও দেয়া হয়ে গেছে। এমনকি কার্ডে চেয়াম্যান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনওর সাক্ষর ছাড়াই অনুমোদন বিহীন ভুয়া কার্ডেও ইউপি সচিবের সাক্ষরেই দেখানো হয়েছে চাল বিতরণ। কে নিয়েছে এই চাল ? মাসের পর মাস কার্ডধারী পরিবার গুলো চাল না পেলেও তাদের প্রাপ্প চাল কোথায় ? এমন প্রশ্নে ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর। ইউনিয়নের ৪নং চর যতিন গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেকের স্ত্রী বিবি কুলসুম বলেন, বছর খানেক আগে আমি কার্ডের জন্য আবেদ করেছি। বাড়িতে না থাকার কারণে সময় মতো আমি কার্ড আনতে পারিনি। গেলো সপ্তাহে পরিষদে গিয়ে সচিবের কাছ থেকে কার্ড চাইতেই সে দিতে রাজি না হলেও তার কাছ থেকে জোড়পূর্বক আমার কার্ড নিতেই দেখি কার্ডের উপরে শুধু আমার ও আমার স্বামীর নাম ঠিকানা দেয়া আছে। কিন্তু কার্ডের ভিতরে চেয়ারম্যান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনও কারো কোন সাক্ষর নেই। অথচ কার্ডের মধ্যে দেখা যায় শুধু মাত্র সচিবের সাক্ষরে পাঁচ মাসের চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে। অনুমোদন বিহীন এ ধরনের কার্ডে শুধু মাত্র সচিবের সাক্ষরে কিভাবে চাল দেয়া হলো। কে নিয়েছে, কাকে দেয়া হয়েছে এ চাল? এমন প্রশ্নে পরিষদ থেকে সচিব তরিগরি করে বিবি কুলসুমকে তারিয়ে দেয়। এধরনের অসংখ কার্ডেই দেখা যায় চেয়ারম্যান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনও কারো কোন সাক্ষর না থাকলেও শুধু মাত্র ইউপি সচিবের সাক্ষরেই চাল বিতরনের প্রমান রয়েছে। শুধু আমার কার্ডই নয়, আমার মতো আরো বহু মানুষের কার্ডই সচিব নিজের কাছে রেখে দিয়ে তার সাক্ষর দিয়ে এভাবেই চাল উত্তোলন করেছেন।
তবে অনুমোদন বিহীন কার্ডে সাক্ষর দিয়ে চাল দেয়ার বিষয়টি সম্পুর্ণ অস্বিকার করে হাজিরহাট ইউনিয়নের পরিষদের সচিব মোঃ ইয়াজ উদ্দিন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান কথা বাহিরে আমি কিছু করিনি। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান আমাকে কার্ড রাখার নির্দেশ দেয়াতে আমি সকলকে বলেছি তাদের কার্ড জমা দিতে। সেই মোতাবেক কেউ কেউ জমা দিলেও বেশির ভাগ মানুষই তাদের কার্ড জমা দেয়নি।
এদিকে টানা পাঁচ মাসের চাল পাওয়ার দাবীতে গেলো ১৭ নভেম্বর ভুক্তভোগী পরিবার গুলো ইউনিয়নটির চর ফৈজুদ্দিনের প্রধান সড়কে মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা বলেন, ভিজিডি কার্ডে সমস্যা হলে ইউনিয়নের ৮০৮টি কার্ডই জব্দ করে রেখে দিতো। কিন্তু তারা তা না করে শুধুমাত্র সাবেক চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দিপক যিনি গেলো নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন বেছে বেছে তার সমর্থদেরকেই চাল না দিয়ে উল্টো তাদের কার্ড রেখে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, বর্তমানে যারা চাল পায়নি তাদের কার্ডে কিংবা কোন কিছুতেই সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু একটাই তারা নৌকার প্রার্থীর ভোট করেছে। আনারস প্রতিকের বিদ্রোহী প্রার্থী নিজাম উদ্দিনের ভোট না করাতেই এখন তিনি চেয়ারম্যান হওয়ায় নৌকার সমর্থিত ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষকেই বিভিন্ন ভাবেই ভোগান্তীর মধ্যে ফেলছে। বঞ্চিত করছে ইউনিয়নের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে। এমনকি কার্ড গুলো আটকে রেখে সেই কার্ডে ইউপি সচিব নিজেই সাক্ষর দিয়ে চাল উঠিয়ে কাকে দিয়েছে সেটা সচিব ছাড়া কেউই বলতে পারে না। এমনকি চাল বিতরণের যে তালিকা রয়েছে, সেই মাষ্টারুলও পরিবর্তন করে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে মাষ্টারুল। যা পুরোপুরিই নিয়মন বহির্ভুত।
এ ব্যাপারে ইউনিয়নটির নবনির্বাচিত চেয়াম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। অধিকাংশ কার্ডের নামের সাথে অনলাইন তালিকায় গড়মিল থাকার কারণে ওই সকল কার্ড জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রকৃত কার্ডধারী লোককেই চাল দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোঃ শামিম মিঞার (ভারপ্রাপ্ত) নখদর্পনে এলেও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ করেনি। এরপর বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে কোন ধরনের অনিয়ম খুজে পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলেন তিনি।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।