যুদ্ধজাহাজে বজ্রপাত ক্ষেপণাস্ত্র বসাচ্ছে চীন
বিশ্ব পরাশক্তি হয়ে উঠতে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন অস্ত্রের আধুনিকায়ন করে চলেছে চীন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার যুদ্ধজাহাজগুলোতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) বা বজ্রপাত অস্ত্রের নয়া সংস্করণ ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান’ বসাচ্ছে বেইজিং।
দেশটির সেনাবাহিনী পিপল’স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নিয়ন্ত্রিত এ অস্ত্র বসানোর কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব শিগগিরই এগুলো কার্যকর হবে। এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হতে যাচ্ছে চীনা নৌবাহিনী। ভয়াবহ এ যুদ্ধপ্রযুক্তি সমুদ্রে দেশটির নৌ-সক্ষমতাই বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন এ অস্ত্রের খবরে নড়ে বসেছে ওয়াশিংটনের অস্ত্র বিশেষজ্ঞরাও। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পরমাণু বোমার চেয়েও গণবিধ্বংসী ও আরও ভয়ংকর অস্ত্র তৈরির নেশায় মেতেছে বিশ্ব।
নতুন এ ভয়াবহ অস্ত্রের নাম ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) বা বজ্রপাত অস্ত্র। লেজার রশ্মির মতো আলোর গতিতে লক্ষ্যে আঘাত হানে আর মুহূর্তেই পুরো একটি শহর ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। ইলেক্ট্রনের রশ্মি ছুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে উন্নত কম্পিউটার ব্যবস্থা, আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে সক্ষম এই অস্ত্র।
প্রধানত প্রতিপক্ষের যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, রাডারসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্র অকেজো করে দেয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে এগুলো।
এখন পর্যন্ত সামরিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং এশিয়ার উদীয়মান শক্তি চীন ও ভারত এই অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়া ও ইরানের হাতেও এই অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) হচ্ছে ইলেক্ট্রন ও চুম্বকীয় শক্তির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলোক রশ্মির আঘাত। হলিউডের সায়েন্স ফিকশন সিনেমাগুলোতে বেশ আগে থেকেই এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার দেখানো হচ্ছে। এ অস্ত্রই এখন নিজেদের সব যুদ্ধজাহাজে বসানো শুরু করেছে বেইজিং। এটাকে ‘রেলগান প্রযুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে পিএলএ।
এ প্রযুক্তিতে বিস্ফোরকের পরিবর্তে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্লোবাল টাইমস জানায়, এক্ষেত্রে কাজের একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে পিএলএ। কোনো দেশের অনুকরণ ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে কয়েক বছর ধরে গোপনে এর কাজ চলছে। সম্প্রতি গোপন একটি জায়গা থেকে এর প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়। চলতি সপ্তাহেই ইন্টারনেটে তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এরপরই নড়েচড়ে বসে মার্কিন অস্ত্র বিশেষজ্ঞেরা। সমর বিশেষজ্ঞ ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের সাবেক পরিচালক কার্ল শুস্টার সিএনএনকে বলেন, ‘চীনা গণমাধ্যমের রিপোর্টটি যদি সত্য হয়, তাহলে নৌবাহিনীতে অস্ত্রটি পুরোপুরি কার্যকর হতে আর মাত্র এক থেকে দুই বছর লাগতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো যেকোনো সময় তারা এর ঘোষণা দেবে।
যার মানে কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আর এর বাস্তবিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই তারা এর পরীক্ষা চালাচ্ছে। এক বছরের মধ্যেই এগুলো মোতায়েন করা হতে পারে।’
শুস্টার বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, চীন বিদেশি অস্ত্র নকল করা থেকে বেরিয়ে আসছে এবং একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তিতে অস্ত্র নকশা ও এর উৎপাদন করছে।
চীনের মোকাবেলায় যা করছে ভারত
চীনের প্রভাব কমাতে প্রতিবেশি পাঁচ দেশে গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করছে ভারত। ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় এসব গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনা করা হবে। একইসঙ্গে দেশগুলোতে ৫০০ এর বেশি ছোট ছোট টার্মিনাল স্থাপন করবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিটি দেশে ভারতের খরচ হবে ৫ থেকে ৬ কোটি রুপি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ছাড়াও দিল্লির এমন পদক্ষেপে আদতে ভারতেরই লাভ হবে। এসব স্টেশন এবং টার্মিনালের সাহায্যে টেলিভিশন সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও টেলি-মেডিসিনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের একটি দল ওই প্রজেক্ট চূড়ান্ত করতে ভারত সফর করেছে। বাংলাদেশজুড়ে কমপক্ষে ১০০টি টার্মিনাল থাকবে এবং সম্ভবত ঢাকায় একটি বড় গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হবে।
সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে আরও বলা হয়, প্রথম গ্রাউন্ড স্টেশনটি ভূটানের রাজধানী থিম্পুতে নির্মাণ করা হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারি এর উদ্বোধন হতে পারে।
ওই সূত্র জানায়, ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান আলফা ডিজাইন টেকনোলজিস এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যারা গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে ১০০টি ভিস্যাট (ভেরি স্মল অ্যাপারচার টার্মিনাল) সংযোগের বিষয়টি দেখভাল করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, স্যাটেলাইটের ওপর নজরদারির জন্য তিব্বতে চীনের যে স্থাপনা রয়েছে তা মোকাবিলায় থিম্পুতে এই গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করছে ভারত।