ব্রেকিংঃ

হাফিজ সাঈদ সন্ত্রাসী নয়: পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও লস্করে তৈয়্যবা, জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান মৌলানা হাফিজ সাইদকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পাক প্রশাসন।

গত বুধবার লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা যাওয়ার পথে পাঞ্জাব প্রদেশের কাউন্টার টেররিজম স্কোয়াড তাকে গ্রেফতার করা হয়। খবর দ্যা ডন-এর।

তবে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভেশ কুমার বলেন, “আমরা গ্রেফতারের প্রতিবেদন দেখেছি। এবার তাকে গ্রেফতারের পেছনে সরকারের দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে। তবে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হঠকারিতা বলে জানালেন তিনি।

রভেশ কুমার বলেন, হাফিজ সাঈদ সন্ত্রাসী নয়। এসময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের উচ্ছ্বসিত টুইট বার্তারও প্রতিবাদ করেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাদের বৈঠকের কয়েকদিন আগে হাফিজ সাইদের গ্রেফতারে পাকিস্তানজুড়ে তোপের মুখে পড়েছে ইমরান সরকার।

এদিকে, হাফিজের গ্রেফতারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত টুইটে বলেছিলেন,  ১০ বছর ধরে খোঁজাখুজির পর মুম্বাই হামলার স্বঘোষিত ‘মাস্টারমাইন্ড’কে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান। তাকে খুঁজতে গত দুই বছরে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছে”।

তবে ট্রাম্পের এই টু্ইটের জবাবে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংস্থা পাল্টা টুইটে বলে, দশ বছর ধরে তাকে খোঁজ করা হচ্ছে না। ২০০১ সালের ডিসেম্বর, ২০০২ সালের মে, ২০০২ সালের অক্টোবরে, ২০০৬ সালের আগস্টে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, ২০০৯ সালের সেপ্টম্বর এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে গ্রেফতার করে এবং ছেড়ে দেয় পাকিস্তান।

এর আগে বিবিসি উর্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলানা হাফিজ সাঈদের সংগঠন জামাতুদ- দাওয়া, লস্করে তৈয়্যবা, ফালাহে ইনসানিয়্যাত-এর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অপরাদ দমন শাখা (সিডিডি)।

সিডিডির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, হাফিজ সাঈদের সংগঠনগুলো সন্ত্রাসীদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করে বলে তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানায়, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় পাকিস্তান সরকার বেআইনি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করছে, তারই অঙ্গ হিসাবে  হাফিজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পাকিস্তান জঙ্গিদের অর্থের জোগান দিচ্ছে অভিযোগ করে সম্প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দেয় আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফএম ও এফআইটিএফ। জানানো হয়, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান দেওয়া বন্ধ না করলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

এই হুঁশিয়ারির পর ইসলামাবাদের সন্ত্রাস দমন দফতর জানায়, জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য দেওয়ার অভিযোগে হাফিজসহ কয়েকজন জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তারা। বুধবার (১৭ জুলাই) তাকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৮ এর মুম্বয়ের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সন্ত্রসী হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিল। ওই হামলার পর থেকে মৌলানা সাঈদ ভারত ও মার্কিন প্রশাসনের নজরে রয়েছে। ওই হামলার পরই হাফিজ সাঈদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০১২ সালে  আমেরিকা তাকে ধরে সাজা দেওয়ার জন্য ভরসাযোগ্য তথ্য দিলে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।

২০১৫ সালে পাকিস্তানে মৌলানা হাফিজ সাঈদের সকল সংগঠনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত তিনবার তাকে গৃহবন্দি করেছে পাক সরকার।

২০১৭ সালে হাফিজ ও তার ৪ সহযোগীকে সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনে আটক করে পাকিস্তান সরকার। তবে পাঞ্জাবের জুডিশিয়াল রিভিউ বোর্ড বন্দিদশা বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ১১ মাস পরেই মুক্তি দেয় তাদের।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।