ব্রেকিংঃ

আমেরিকা-তুরস্ক সম্পর্ক ‍নিয়ে এরদোয়াগানের কলাম

আমেরিকা-তুরস্ক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক সময়ে সেই সম্পর্ক ব্যাপক টানাপোড়েনের মুখে।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এরদোগানের কলাম তুলে ধরা হলো।

জন এফ কেনেডি প্রশাসন ইতালি ও তুরস্ক থেকে জুপিটার মিসাইল সরিয়ে নিয়েছিলেন। বিনিময়ে কিউবা থেকে মিসাইল সরিয়ে নিতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাধ্য করেছিলেন।

১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকা যখন শত্রু মিত্র যাচাই করছিল তখন আমরা আফগানিস্তানে ন্যাটো মিশনের সাথে সৈন্য পাঠিয়েছিলাম।

এসব সত্ত্বেও আমেরিকা বারবার তুরস্কের জনগণের চাওয়া বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের বন্ধুত্ব এখন অবিশ্বাসের পর্যায়ে উপনীত। দুর্ভাগ্য, এই অবস্থা পরিবর্তনে আমাদের কোন প্রচেষ্টা কাজে আসেনি।

যতক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা আমাদের সার্বভৌমত্ব মেনে না নিবে এবং আমাদের দেশের নিরাপত্তা হুমকি উপলব্ধি না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বন্ধুত্ব ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্ক ফাতহুল্লাহ গুলেনের সংগঠন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সরকার ফাতহুল্লাহ গুলান সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা আমার সরকারের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সামরিক ক্যু করতে চেয়েছিল।

সেই রাতে ১০ লাখ তুর্কি জনগণ রাস্তায় নেমে এসে দেশপ্রেম দেখিয়েছিলেন। যেমনটি আমেরিকার জনগণ পার্ল হারবার ও ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পরে নিজ দেশকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু এরোল ওলক এবং তার ছেলে তায়েপ ওলকসহ ২৫১ জন নির্দোষ মানুষ সেদিন সর্বোচ্চ আত্নত্যাগ করেছে দেশের স্বাধীনতার জন্য। ক্যু প্রচেষ্টা যদি সফল হতো তাহলে আমি ও আমার পরিবারও মৃত্যুর মিছিলে শামিল হতাম।

তুরস্কের জনগণ আশা করেছিল আমেরিকা সে দিনের ওই আক্রমনের নিন্দা জানাবে এবং তুরস্কের নির্বাচিত নেতৃত্বের সাথে সংহতি প্রকাশ করবে। কিন্তু সেটা ঘটেনি। আমেরিকার প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক ছিল না।

তারা তুরস্কের গণতন্ত্রের পক্ষে না থেকে চতুরতার সাথে বলেছিল, ‘আমেরিকা তুরস্কে স্থিতিশীলতা ও শান্তি চায়’। ওই ক্যু’র মুল নায়ক ফাতহুল্লাহ গুলেনকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আমেরিকা তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করেনি। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।

হতাশার আরো কারণ এই যে, সিরিয়ার সশস্ত্র গ্রুপ পিকেকে ও ওয়াইপিজিকে সহযোগিতা করছে আমেরিকা। ১৯৮৪ সাল থেকে পিকেকে হাজার হাজার তুর্কি জনগণকে হত্যা করেছে। এমনকি পিকেকে আমেরিকার তালিকাতেও সন্ত্রাসী সংগঠন।

তুর্কি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা ৫ হাজার ট্রাক ও ২ হাজার কার্গো প্লেনে করে ওয়াইপিজিকে অস্ত্র দিয়েছে।

সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কারণে আমাদের সরকার বারবার আমেরিকার অফিসারদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সকল উদ্বেগ বধিরের কানে প্রবেশ করেনি। আমেরিকার ওইসব অস্ত্র তুর্কি জনগণ ও সেনাদের বিরুদ্ধে সিরিয়া, ইরাক ও তুরস্কে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফাতহুল্লাহ সন্ত্রাসী সংগঠনকে অর্থ সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগের তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে আমেরিকার নাগরিক এন্ড্রু ব্রানসনকে তুরস্কের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।

এটাকে পুঁজি করে আমেরিকা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা তুরস্কের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কয়েকবার সাক্ষাৎ ও ফোনে আমি জানিয়েছি যে, এটা বিচারিক প্রক্রিয়া। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বন্ধু দেশের প্রতি মারাত্নক হুমকি দিলেন। তিনি আমাদের কয়েকজন কেবিনেট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্ত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে ধ্বংস করবে। আমরা হুমকি ভয় পাই না। এজন্য আমেরিকার কিছু কর্মকর্তার ওপর আমরাও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি।

বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করা আমাদের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘার্ষিক। সময়ের সাথে সাথে তুরস্ক এখন প্রতিষ্ঠিত। আমেরিকা কথা না শুনলেও তুরস্ক প্রমাণ করে দেখাবে, দেশটি নিজের যত্ন নিজেই নিতে পারে।

স্মরণ করা যেতে পারে, ৭০ এর দশকে ওয়াশিংটনকে পাত্তা না দিয়ে তুর্কি নৃগোষ্ঠীর ওপর গ্রীক ম্যাসাকার তুরস্ক সরকার ঠেকিয়ে দিয়েছিল।

এবারো তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা। উত্তর সিরিয়ায় দুইটি সামরিক অভিযানের পর ন্যাটো সীমান্তের সাথে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

ওই অভিযানের ফলে ওয়াইপিজি যোদ্ধারা সিরিয়ার আফরিন শহর থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এসব বিষয়ে জাতীয় স্বার্থে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

যখন সারাবিশ্বের দুষ্টু লোকেরা ঘাপটি মেরে বসে আছে তখন তুরস্কের ব্যাপারে আমেরিকার একতরফা নীতি গ্রহণ বহু দশকের পরীক্ষিত বন্ধু আমেরিকার স্বার্থ ও নিরপত্তা ক্ষুন্ন করবে।

বেশি দেরি হওয়ার পূর্বেই ওয়াশিংটনের উচিত এলামেলো চিন্তা বাদ দেয়া। কিছু শর্ত মেনে নিয়ে সমাধানে এগিয়ে আসা। নতুবা তুরস্কের হাতে বিকল্প আছে।

একতরফা নীতি ও তুরস্ককে অসম্মান করা থেকে আমেরিকা ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে নতুন বন্ধু ও জোট খুঁজে নিতে আমরা বাধ্য হবো।

সূত্র: নিউয়র্ক টাইমস

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।