ব্রেকিংঃ

ঢাকায় বসেই বেতন নিচ্ছেন ভোলা সদর হাসপাতালের তিন কনসালটেন্ট

স্টাফ রির্পোটার ॥

ভোলা সদর হাসপাতালের তিনজন কনসালটেন্ট ডাক্তার মাসে দুইদিনও হাসপাতালে সেবা না দিয়েই ঢাকায় বসেই বেতন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেন, এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলাম গত দুই মাসে একদিনও হাসপাতালে আসেননি ও অন্য দুইজন অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হক ও মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো. আহসান উল্লাহ রুমি মাসে দু’একদিন হসেপাতালে থাকেন। এভাবেই তাদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন মাসের পর মাস। তারা কোনো দিন রাতের লঞ্চে ভোলায় আসলেও পরের দিনেই আবার ফেরত চলে যান ভোলা ছেড়ে। এক্ষেত্রে সরকার ও সিভিল সার্জনের কোনো নিয়ম নীতি ও নির্দেশনাকে তোয়াক্কাই করছেন না বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো. আহসান উল্লাহ রুমি ১৭ সালের ডিসেম্বরে ভোলাতে যোগদান করেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। প্রথমেই ভোলা সদরের কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সারাক্ষণ চেম্বার করতেন। তবে সেখানে বেশিদিন অবস্থান না করে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করেন। এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলাম একই বছরের নভেম্বর মাসে যোগদানের পর থেকেই ঢাকাতে তার অবস্থান। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির দিকে তিনি মাসে দু’একদিন ভোলাতে আসলেও গত দু’মাসে একদিনও তিনি হাসপাতালে আসেননি। অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হক মাঝে মাঝে ভোলায় থাকেন কিন্তু হাসপাতালে আসে না। হাসপাতালে আসলেও তিনি ভালো করে রোগী না দেখেই চলে যান হাসপাতাল ছেড়ে। এর ফলে ভেঙ্গে পরেছে হাসপাতালের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সকল সেবা। কয়েকজন রোগী আক্ষেপ করে বলেন, হাসপাতালে মেডিসিনের ডাক্তার না থাকায় আমাদেরকে অন্যত্র রেফার করে দিয়েছে। এ ছাড়াও যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার রোগীদের জন্য সার্জারীর ভালো ডাক্তার না থাকায় সে সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সকলে।

ভোলা সদর হাসপাতালের সংস্থাপন শাখা সূত্রে জানা যায়, একশত শয্যাবিশিষ্ট ভোলা সদর হাসপাতালের জন্য ৫০ শয্যার জনবলের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। জেলার ২০ লাখ মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার ভরসা কেন্দ্র এ হাসপাতালের উভয় সংকট হয়ে উঠেছে ডাক্তার সংকট। একশত শয্যায় ৫৭ জন ও ৫০ শয্যার জন্য ২২ জন ডাক্তারের কথা থাকলেও সেখানে আছেন মাত্র ১১ জন ডাক্তার। তাদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিভাগ মেডিসিন, এনএসথেসিয়া ও অর্থোপের্ডিক ৩ জন ডাক্তারই সেবা না দিয়েও ঢাকায় বসে বেতন নেন যথারীতি নিয়মে। কিন্তু সে পরিমাণে হাসপাতালে তারা অবস্থান করেন না। এদিকে জানা যায়, গত আগস্ট মাস জুড়ে ভোলা সদর হাসপাতালে তিন হাজার জন রোগী বেডে সেবা নিয়েছেন এবং জরুরি বিভাগ থেকে চার হাজার চারশত জন জরুরি সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়াও ৫ টাকার টিকেট করে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী আউট ডোরে সেবা নিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার  বলেন, এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলামকে গত দু’মাস আগেই নোটিশ দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দু’মাস পর্যন্ত তিনি এর কোনো সমুচিত জবাব না দেয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অর্থোপের্ডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হকের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। সে হাসপাতালে ভালো করে রোগী দেখেন না ও হাসপাতালে থাকেন না। সে জন্য তাকে শোকজ করা হয়েছে। তবে মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো. আহসন উল্লাহ রুমি একমাত্র মেডিসিন কনসালটেন্ট হওয়ায় তাকে কিছু বলা যাচ্ছে না। নতুন একজন কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট নিয়োগ পেয়েছে। আশা করি মেডিসিন রোগীদের অকেনকটাই কষ্ট লাঘব হবে। তবে এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। তাই রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে আমাদের সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদেরকেও পাওয়া যায়নি।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।