ব্রেকিংঃ

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে কাঁদলেন মাহবুব তালুকদার

জনতার বানী ডেক্স:

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের নানা স্মৃতির কথা মনে করে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করেন তিনি।বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণার সময় মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। সবাই এরপর আর কোনো কথাও বলতে পারছিলেন না তিনি।

বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার বারবার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরকারিভাবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক স্মৃতির মধ্য হতে আজ মাত্র দুটি বলব।’

‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনই তিনি আমায় ডেকে বলেন, মাহবুব তুমি আমার সঙ্গে থাকবা। আমাকে রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।’

পদবি বড় কথা নয়, দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার পর স্বভাবতই খুব খুশি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব পড়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নেয়ার। সিদ্ধান্ত হয় দুপুরে খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশ্রামের সময়টুকুতে আমি তার রুমে ঢুকে যাব।

বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন, যদি কোনো অজুহাতে ডিকটেশন দেয়ার জন্য তিনি সময় না দিতে পারেন, তাহলে আমি যেন জোর করে ডিকটেশন নিই।’

‘আমি পরপর তিনদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নিই। তার ডিকটেশন রেকর্ডও করি। চতুর্থ দিন এসে বঙ্গবন্ধু বেঁকে বসেন। বলেন, তোমার জন্য তো আমি বিশ্রামটুকুও নিতে পারছি না।

আমি তাকে বলি, আইয়ুবের শাসন, আপনার ছয় দফা, পাকিস্তানের জেলে বন্দির দিনগুলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা- এরকম গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে তো আপনাকে ডিকটেশন দিতে হবে। আপনার বিশ্রামের সময় আপনাকে বিরক্ত করা আমারও ভালো লাগে না। তাই আপনি আমাকে অন্য একটা সময় বের করে দিন।’

‘বঙ্গবন্ধু বলেন- আমি সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনছি, পরিবারের বিয়ে-শাদি শেষ করে দিয়েছি। সামনেই ডিকটেশন নেয়ার সময় বের করে দেব। কোনো কিছুই আটকে থাকবে না। এরপরেই সেই ঘৃণ্য আগস্ট।’

১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের অপর একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান যেদিন মারা যান, সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সারাদিন ছিলাম।’

‘চল্লিশার দিনে ঠিক হয় বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। গাজী জাহাজে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়।

আমার জাহাজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকায়, কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেওয়ার কথা মনে হয়নি। রাতে জাহাজ ছাড়লে দেখি, আমার শোবার কোনো জায়গা নাই। একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পড়ি।

পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, রাব্বানি জেগে আছেন। আমার মাথার নিচে বালিশ। আমি অবাক হয়ে রাব্বানিকে জিজ্ঞেস করি, এই বালিশ আমার মাথার নিচে কে দিলেন? রাব্বানি বলেন- রাতে বঙ্গবন্ধু রাউন্ডে এসেছিলেন। তিনি দেখেন আপনি মাথার নিচে হাত দিয়ে সোফায় শুয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু তার রুমে গিয়ে বালিশ নিয়ে এসে আপনার মাথার নিচে রেখে গেছেন।’

বেদনাময় কণ্ঠে মাহবুব বলেন, ‘আমি জানতাম বঙ্গবন্ধুর দুটি বালিশ ছাড়া ঘুম হয় না। তখন আমি বালিশ ফিরিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর রুমের দিকে যাওয়ার কথা বলি। রাব্বানি জানান, গিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন।’

‘ভোর পাঁচটা। জাহাজ চলছে। নীরবতা চারদিকে। জাহাজের সামনের দিকে এগিয়ে দেখি, একটি ইজি চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধু কবিতা আবৃত্তি করছেন। নম নম নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি/গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ-সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি। কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে তিনি পা দুলাচ্ছেন।’

‘আবৃত্তি শেষে আমাকে খেয়াল করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন- মাহবুব, রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তো? আমি বললাম- না। কেন? আমি তো তোমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে আসলাম। উত্তরে বঙ্গবন্ধুকে বলি, আপনি আমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে এলেন। আপনিই বলুন, আপিন কারও মাথার নিচে বালিশ দিয়ে এলে তার পক্ষে কি আর ঘুমানো সম্ভব!’

 

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।