ব্রেকিংঃ

ভেলুমিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাছ ও মাছ লুট করল দুই পুলিশ কনস্টেবল।।

ভোলা প্রতিনিধি ॥
ভোলার ভেলুমিয়ায় ছুটিতে বাড়ি এসে অন্যের মালিকানাধীন জমির গাছ কেটে ও পুকুরের মাছ লুটে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে এএসআই পরিচয়দানকারী পুলিশ কনস্টেবল আলী আজগর কাজী ও কনস্টেবল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। দুই ভাইর এক ভাই ঢাকায় পিবিআই’তে ও অপর ভাই পটুয়াখালীতে কর্মরত।
ছুটিতে ভোলার ভেলুমিয়ার বাড়ি এসেই চলছে তাদের রাম-রাজত্ব। আশপাশের মানুষের জমি দখল, গাছ কেটে নেয়া, পুকুরের মাছ লুটসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচাছেন দুই ভাই। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার ভোলার ভেলুমিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি টিম দুই ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে বিরোধপূর্ণ জমির গাছ কাটার প্রমান পান। একই সঙ্গে এধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় রুহুল আমিন কাজির ছেলে আজগর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বক্তব্য দিতেও অস্বীকৃতি জানান। তবে কোন বিরোধপূর্ণ জমি নয়। নিজেদের মালিকানাধীন জমির গাছ কাটেন বলে দাবি করেন।
পুলিশের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা মনিন্দ্র চন্দ্র শীল গংদের সাথে প্রতিবেশী রুহুল আমিন কাজী গংদের দীর্ঘদিন ধরে ৮৩ খতিয়ানের ৮২নং দাগের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। রুহুল আমিন কাজীর ছেলে এএসআই পরিচয়দানকারী পুলিশ কনস্টেবল আলী আজগর, পুলিশ কনেস্টবল মিজানুর রহমান ও ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আলী আকবরের ক্ষমতা দেখিয়ে প্রতিবেশী মনিন্দ্র চন্দ্র শীল গংদের ভোগদখলীয় জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এছাড়াও দুই ছেলে পুলিশের চাকুরি করে এই ক্ষমতায় রুহুল আমিন কাজী প্রতিবেশী মনিন্দ্র চন্দ্র শীল গংদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে। রুহুল আমিন কাজী ও তার ছেলেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল, তুশা রানী শীলকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুইপক্ষকে নিয়ে শালিস বৈঠকে বসা হয়। শালিসদারগণ দুইপক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জমি মেপে পিলার স্থাপন করে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল গং ও রুহুল আমিন কাজী গংকে জমি বুঝিয়ে দেয়। শালিসদারগণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল এর ছোট ভাই রাখাল চন্দ্র শীল তার জমিতে ঘর নির্মানের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় কাজী বাহিনী।
পরে রুহুল আমিন কাজী শালিসদারদের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলা আমলে নিয়ে বিরোধীয় ৮৩ খতিয়ানের ৮২নং দাগের জমির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বিজ্ঞ আদালত দুইপক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
রুহুল আমিন কাজী মুক্তিযোদ্ধা না হলেও তিনি জাল জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কেটায় দুই ছেলেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে ও এক ছেলেকে ডিসি অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি বাগিয়ে নেন। ছেলেরা বাড়ি এসে অপকর্ম শুরু করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মনিন্দ্র শীলের মালিকানাধীন জমির গাছ কেটে নেয়। পুকুরের মাছ ধরে। বিষয়টি মনিন্দ্র চন্দ্র শীল স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং ভেলুমিয়া ফাঁড়ির পুলিশকে জানায়। এএসআই আলী আজগর, কনস্টেবল মিজানুর রহমান আইনের লোক হয়েও বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শ্রমিক নিয়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জমিতে প্রবেশ করে ৬টি রেইনট্রি গাছ কাটে।
কনস্টেবল আলী আজগর, কনস্টেবল মিজানুর রহমান প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে প্রতিপক্ষ মনিন্দ্র চন্দ্র শীল আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা জমি থেকে গাছ কাটা বন্ধ করতে সাহস পায়নি। পরে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা জমি থেকে গাছ কাটা বন্ধে ভেলুমিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। অভিযোগ পেয়ে এএসআই মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে এসে রুহুল আমিন কাজী ও তার ছেলেদেরকে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা জমি থেকে গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল এর ভাই রাখাল চন্দ্র শীল বলেন, আমাদের জমি দীর্ঘদিন ধরে রুহুল আমিন কাজী গংরা জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছে। তার দুই ছেলে পুলিশে এবং এক ছেলে ভূমি অফিসে চাকরি করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে রুহুল আমিন জমিদখলসহ আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছেন। শালিসদারগণ দুইপক্ষের কাগজপত্র দেখে জমি মেপে পিলার স্থাপন করে জমি বুজিয়ে দেওয়ার পর রুহুল আমিন সেই শালিস না মেনে আদালতে মামলা করেন। আদালত উক্ত জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিজেরা মামলা করেও রুহুল আমিন, তার ছেলে এএসআই আলী আজগর, কনস্টেবল মিজানুর রহমান, ভূমি অফিসের অফিস সহকারী আলী আকবর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে উক্ত জমির গাছ কর্তন, পুকুরে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা তাদের ভয়ে কিছুই বলতে সাহস পাচ্ছি না। আমাদেরকে বাড়ি থেকে উৎখাত করার জন্য রুহুল আমিন কাজী ও তার ছেলেরা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এ ব্যাপারে আমরা বিজ্ঞ আদালত, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এএসআই আলী আজগর বলেন, বড় গাছের ছায়া পরে নিচের ছোট গাছগুলো বড় হতে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা এইগাছগুলোর ঢালপালাগুলো কেটে দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোন গাছ কর্তন করিনি। রুহুল আমিন কাজী বলেন, আমার জমির গাছ আমরা কেটেছি। এই জমি নিয়ে কোন বিরোধ নেই। বিরোধ অন্য জমি নিয়ে।
ভেলুমিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা বলেন, গাছ কর্তনের বিষয়ে মনিন্দ্র চন্দ্র শীল ফাঁড়িতে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এএসআই মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। যেহেতু বিজ্ঞ আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেক্ষেত্রে দুইপক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।