ব্রেকিংঃ

ভোলায় বান্ধবীর সহায়তায় স্কুলছাত্রীকে দলবেঁধে গনধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩।।

স্টাফ রিপোর্টার ভোলা

ভোলা সদর উপজেলায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৭)কে বান্ধবীর মাধ্যমে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে রিসোর্টে নিয়ে রাতভর দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে দুই বখাটের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ভিকটিম বাদী হয়ে ওই বান্ধবীকেসহ তিন জনকে আসামি করে ভোলা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

মামলার আলোকে পুলিশ দুই ধর্ষক ও এক সহযোগীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এরা হলেন ভোলা পৌরসভা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল রোড এলাকার মো. সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. নুর উদ্দিন সজিব (৩৮), সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদুর চর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে মো. সোহেল (৩৭) ও ভোলা পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়া এলাকার শাহিন মহাজনের মেয়ে আজমিন আক্তার (২০)।

মামলার এজহার ও ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভিকটিম ভোলা সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়েন। গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেলে তাঁর বান্ধবী আজমিন আক্তার তাকে ফোন করে মীম নামের অপর এক বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষে তার মায়ের কাছ থেকে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য অনুমতি নেয়। পরে আজমিনের কথা অনুসারে সে বাসা থেকে ভোলা শহরের নাবরুন সেন্টারের নিচতলায় পার্কিংয়ে আসে। সেখানে এসে আজমিনের সাথে নুর উদ্দিন সজিব ও মো. সোহেল নামের দুইজন পুরুষকে দেখতে পায়।

এদের মধ্যে সজিবকে ভিকটিম আগ থেকেই চিনতেন এবং আজমিন সোহেলকে তার দুসম্পর্কের ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় ও ওদের সাথে একটু ঘুরে এসে তারপর মীমের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বলে জানায়। তার কথায় ভিকটিম ওদের সাথে একটি প্রাইভেটকারে করে ঘুরতে যায়। প্রথমে তারা সদর উপজেলার বাঘবামার ব্রিজে যায়।

সেখানে গিয়ে আজমিন ও সজিব তাকে বিয়ার পান করতে বললে সে এগুলো খাবে না বলে জানায়। পরে বিয়ারের সাথে পানি জাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে সমস্য হবে না বলে সেটি পান করতে বলে। তাদের অনুরোধে ভিকটিম সেটি পান করে। সন্ধ্যায় ভিকটিমের মা বাসা থেকে ফোন করলে আজমিন ফোন ব্যাক করে তার মাকে বলে রাতে ওই বান্ধবীর (মীমের) বাসায় হাঁস পার্টির আয়োজন আছে। সেটি শেষ করে তারা বাসায় আসবে। পরে তাকে বিয়ার ছাড়াও আরো একটি নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করালে সে গাড়ির মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। এই সুযোগে তারা তাকে চরফ্যাশন উপজেলার খামার বাড়ি রিসোর্টে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে সজিব। তাকে কোনো মতে অর্ধঘুমন্ত অবস্থায় ওঠিয়ে খামার বাড়ির ভিতরে গিয়ে একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে সে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দেড় টার দিকে সে ঘুম থেকে জেগে দেখে তার শরীরের কাপর পাশে পড়ে আছে। কাপড় পড়ে আজমিন কোথায় আছে বলে ভিকিটম ডাকচিৎকার দিলে সজিব তাকে হুমকি দেয় যে ডাকচিৎকার দিলে তাকে মেরে ফেলবে। এ অবস্থায় পাশের রুমেই আজমিনকে খুজে পায় সে। পরে আজমিনকে এখানে কিভাবে আসছে জানতে চাইলে আজমিনও তাঁর সাথে খারাপ আচরন করে এবং সজিব ও সোহেলের সাথে রাত কাটাতে বলে ওই রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। পরে সজিব ও সোহেল জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে সকাল ৬টার দিকে সে অসুস্থ্য বোধ করলে তারা সেখান থেকে বেড়িয়ে গাড়ীতে করে ভোলায় রওনা হয়। এবং গাড়ীর মধ্যে এ কথা কাউকে না বলার জন্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ ও হুমকি দিতে থাকে। পরে সকাল ১০টার দিকে ভোলা সদরে এনে নাবরুণ সেন্টারের সামনে আমজিন ও তাকে নামিয়ে দেয়। বিষয়টি ভিকটিম বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানায়। পরে ২৮ তারিখ ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে ভোলা থানায় এ তিনজনকে আসামী করে মামলা করেন। মামলার আলোকে পুলিশ এদের তিন জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

ভিকটিমের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে আসামীদের লোকজন তাদেকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে প্রলোভন দেখাচ্ছে। তারা প্রভাবশালী হওয়া ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্ট নিয়েও শঙ্কায় আছেন তারা।

ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. লোকমান হাকিম জানান, গত ২৮ তারিখ রাতে ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য এসেছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁর নমুনা সংগ্রহ করেছে। যথা সময়ে মেডিকেল রিপোর্ট দায়িত্বপ্রপ্ত কর্মকর্তার নিকট জমা দেয়া হবে। তবে মেডিকেল রিপোর্ট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদ হোসেন জানান, মামলার তিন আসামিই জেলে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, মামলার সাথে সাথেই তিন আসামীকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।