ব্রেকিংঃ

ভোলায় তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন।।

স্টাফ রিপোটার।। ভোলায় তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য উচ্চ হারে বাড়ানোর দাবিতে সোমবার (২০ মার্চ ২০২৩) ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ভোলা যুব ফোরাম, মা-সংসদ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, সাংবাদিক, এবং সুশীল সমাজ।ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্যা রুরাল পূওর-ডর্প এর সহযোগিতায় আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভোলার প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্বীপবাণী পত্রিকার সম্পাদক মো: আবু তাহের, সরকারী ফজিলাতুন্নেছা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার রুহুল আমীন জাহাঙ্গীর, যুগান্তর/আর টিভি ভোলা প্রতিনিধি অমিতাভ রায় অপু, ডরপ প্রতিনিধি, গ্রুপ এবং মা-সংসদ সদস্যগণ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: আনোয়ার হোসেন, যুব ফোরাম সদস্য ।এ সময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.৯২% হবে। দীর্ঘমেয়াদে ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের ধূমপায়ীকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে এবং উচ্চ স্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ধূমপায়ীদের সস্তা ব্রান্ড বেছে নেয়ার আগ্রহ কমবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশকৃত সুনির্দিষ্ট কর প্রবর্তনের মাধ্যমে কর পদ্ধতির সংস্কার (যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রচলিত রয়েছে) সিগারেট করকাঠামোর কার্যকারিতাকে আরো শক্তিশালী করবে।মানববন্ধনে বক্তারা আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য তিনটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করেন-১. সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২. ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩. জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা অর্থাৎ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
প্রবীণ সাংবাদিক মো: আবু তাহের বলেন, “২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে করারোপে উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে কেবল সিগারেট খাত থেকেই প্রায় ৪২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।”
ভোলা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু বলেন, “তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে পারছে না। কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে।”তিনি আরও মন্তব্য করেন সিগারেটের চারটি স্তর থাকার ফলে সিগারেট ব্যবহারকারী সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে কমদামি সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
যুব ফোরাম সদস্য শাকিলা জাহান বলেন, তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে প্রায় ১০ লক্ষ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত করা যাবে এবং প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ তরুণ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে কার্যকরী পদক্ষেপ হবে তামাকজাত পণ্যে কর বৃদ্ধি করা,” তিনি যোগ করেন। তিনি আরও মন্তব্য করেন তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে কম দামি বিড়ি ও সিগারেটের কর-মূল্য ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে যাতে এগুলো আর সুলভ না থাকে।
মা-সংসদ সদস্য শাহানা বেগম বলেন, “যেহেতু এড ভেলোরেম কাঠামোতে কর বৃদ্ধি করেও নিম্ন স্তরের সিগারেট ও বিড়ির দাম সুলভ রয়ে যাচ্ছে তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী কর আরোপ করার।”
দরিদ্র জনগোষ্টির পক্ষে মো: নাজিম উদ্দিন বলেন, সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জনগণের স্বার্থে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে উচ্চ হারে তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধি করতে। “সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়ান যাতে তা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।”
আরো বক্তব্য রাখেন, প্রফেসার রুহুল আমীন জাহাঙ্গীর, মোকাম্মেল হক মিলন, হাসনাইন আহম্মেদ মুন্না প্রমুখ।
উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৪ এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এসব লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি হচ্ছে একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। একইসাথে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।