ব্রেকিংঃ

ভোলার গঙ্গাপুরে সন্ত্রাস আর রক্তগঙ্গায় হোলীখেলার দুই খলনায়ক মাইনউদ্দিন-বজলু !!

ষ্টাফ রিপোর্টার॥ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শান্তিপ্রিয় একটি জনপদের নাম গঙ্গাপুর। প্রমত্ত্বা তেতুলিয়া নদীর কুল ঘেসে অবস্থিত এ ইউনিয়নটিতে ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। কৃষিকাজ,মাছধরা আর ক্ষুদ্র ব্যবসা করে এদের জীবন-জীবিকা চালে। এখানকার মানুষগুলো অতি শান্তিপ্রিয় হলেও এদের সেই শান্তির জীবনে অশান্তির আগুন জালাচ্ছে- মাইনউদ্দিন-বজলু নামের দুই ব্যাক্তি। তাদের শাসন-শোষন,জুলুমবাজী আর অন্যায়-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পরিবার ভিটে-বাড়ী ছাড়া হয়েছে বহু আগেই। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে গেলে সেখানকার শ্রেনীপেশার মানুষ গণমাধ্যমের কাছে মাইনউদ্দিন-বজলুর সন্ত্রাসলীলার নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তারা বলেন,২০০১সালে বিএনপি জোট সরকারের ক্ষমতাকালে এ দুই ব্যাক্তির আকস্মিক উত্থান ঘটে। সেইসময়ে ভোলা-০২ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহীমের সেল্টারে এরা গঙ্গাপুরের জনপদে ত্রাসের রাজত্ব চালাতে থাকে। তখনকার সময় থেকেই ওই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে মাইনউদ্দিন-বজলু নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের ফরমান জারি করেন। তাদের অন্যায় আদেশের হেরফের হলে এরা গ্রামের জনপদে মানুষের জান-মালের উপর লুটের মচ্ছব চালাতো। এলাকাবাসী জানায়,মাইনউদ্দিন ও বজলু এতই ভয়ঙ্কর যে, তাদের শোষণ-নিপীড়নের শিকার হয়ে গঙ্গাপুরের বহু পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যানুযায়ী, বিএনপি জমানায় তৈরী হওয়া এদের সন্ত্রাসকর্মের শিখর এখন অনেক গভীরে চলে গেছে। মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে এ দু’জন ব্যাক্তি কয়েকবছরেই বিপুল পরিমান বিত্ত্ব-বৈভবের মালিক হয়েছেন। এলাকায় ব্যাপক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন বজলু এবং ঢাকায় বাড়ী-গাড়ীসহ অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন-মাইনউদ্দিন কাজী। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে তার রয়েছে শতকোটি টাকা মূল্যের প্রাসাদসম আলীশান বাড়ী এবং রয়েছে পরিবহনের রমরমা ব্যবসা।

এলাকাবাসী জানায়,গ্রামের নিরীহ মানুষের জমিজমা দখল,চাঁদাবাজী,লুন্ঠন,নারীদের সম্ভ্রমহানী,বিচারের নামে প্রহসন,মিথ্যে মামলায় লোকজনকে হয়রানীসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এরা না করছেন।
সূত্রমতে,গঙ্গাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত-মো:আব্দুল বারেক আকন মিয়ার পুত্র বজলু আকন কিশোর বয়স থেকেই ভয়ঙ্কর বহু অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েন। পারিবারিক শাসন আর বাধা-বিপত্তির অভাবে বজলু আকন কালক্রমে আরো যেনো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। গড়ে তোলেন দুর্ধর্ষ একটি কিশোর গ্যাং। এক পর্যায়ে একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত-মো:ইউসুফ কাজীর পুত্র মাইনউদ্দিন কাজীকে সাথে নিয়ে বজলু আকন তার কিশোর বাহিনীর সন্ত্রাসকর্মের পরিধি আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেন। তথ্যমতে,বিএনপি জোট ক্ষমতাকালের শেষদিকে বজলু গ্রুপের আকার ছোট হয়ে যায়। তার গ্রুপ থেকে মাইনউদ্দিন কাজী সরে গেলেও তাদের দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কের কোনোপ্রকার চির ধরেনি। মাইনউদ্দিন তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ভিন্নদলে বিভক্ত হয়ে গঙ্গাপুরে আধিপত্য চালাতে এলাকা ভাগ করে নেন। এভাবে দু’জনের দু’টি গুন্ডাবাহিনী শান্তিপূর্ণ গঙ্গাপুরের জনপদে যেনো সন্ত্রাস আর নির্মমতার রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে থাকে। তাদের অন্যায়কাজের ফরমান জারির বিরুদ্ধে মুখফুটে কেউ সাহস করে প্রতিবাদের “প” উচ্চারন করলে তার উপর নির্যাতনের অন্যরকম নির্মমতা চালানো হতো বলে বিস্তর অভিযোগের অন্ত: নেই। বিএনপি সরকারের পতনের পর মাইনউদ্দিন-বজলুর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা আইনের দাড়স্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা দিয়ে বিচার দাবী করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লুটপাট,নারীর সম্ভ্রমহানী,চাঁদাবাজী আর দখলসন্ত্রাস-সহ অসংখ্য অপরাধের ময়মলায় মাইনউদ্দিন-বজলু আসামী হয়ে বহুবার কারাভোগ করেছেন। ওইসব মামলাগুলোর অধিকাংশ এখনো চলমান আছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়,ভয়ঙ্কর অপরাধের মামলায় জামিন নিয়ে,এরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের সন্ত্রাসীকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্যমতে, বিএনপি জোট ক্ষমতা হারালেও মাইনউদ্দিন-বজলু’র প্রভাব-প্রতিপত্তির চুল পরিমান কমতি ঘটেনি। এরা জার্সি বদল করে এখন সরকারদলের অদৃশ্য-শক্তির সেল্টারে গঙ্গাপুরে নিজেদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গ্রামবাসী গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন,গঙ্গাপুরের উঠতি বয়সী কিশোরীরা এদের নগ্ন-ছোবল থেকে রেহাই পায়না। এদের ভয়ে সেখানকার বহু পরিবার তাদের কন্যা সন্তানদের ঢাকা,চট্রগ্রাম কিম্বা জেলা সদর ভোলায় নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে পড়া-লেখা করান। স্থানীয়রা জানান,মাইনউদ্দিন-বজলু’র সর্বশেষ টার্গেটে পরেছিলো-সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের কলেজপড়ুয়া কন্যা সন্তান। ওই পরিবারের ভিক্টিমের বাবা সাংবাদিকদের জানান,এসব ক্যাডারদের সঙ্গীয় আরিফ নামের জনৈক বখাটে যুবক তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পরও উত্তক্ত করতো। একপর্যায়ে তার মেয়েকে অপহরনের চেষ্টা চালায়। বিষয়টি নিয়ে মাইনউদ্দিন-বজলু খবরদারী করতে এসে তাদের দলের সদস্য আরিফের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে ক্যাডার ভয়ে ওই পরিবারের অসহায় বাবা তার মেয়েকে এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এমন অসংখ্য ঘটনা গঙ্গাপুরে এখন নিত্যকার হয়ে দাড়িয়েছে বলেও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে কথা হয় গঙ্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন,মাইনউদ্দিন কাজী অতীতে আমার ইউপি সদস্য ছিলেন। তারা দু’জন খুবই ক্রিটিক্যাল ব্যাক্তি বলে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন চেয়ারম্যান রিয়াজ। এসব ঘটনার বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত বজলু আকন ও মাইনউদ্দিন কাজীর সাথে। বজলু আকন বলেন,যেহেতু রাজনীতি করি, সেহেতু আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে হেনস্তা করতে মিথ্যে অপবাদ ছড়াচ্ছে। এলাকায় সন্ত্রাস কিম্বা কোনো অপরাধের সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন বজলু আকন। অপর অভিযুক্ত মাইনুদ্দিন কাজী বলেন,আমার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সম্মানহাণী করতে অপ-প্রচার করছেন বলে দাবী করেন তিনি।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।