ব্রেকিংঃ

রুটি বিক্রেতা আলাউদ্দিনের উত্থান।। ইয়াবা খাওয়া ভিডিও ভাইরাল হলেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যময়।।

স্টাফ  রিপোটার।।

ভোলায় খেয়াঘাটে আটার রুটি তৈরী ও বিক্রি করা থেকে থেকে একাধিক স্প্রিডবোটের নিয়ন্ত্রক আলাউদ্দিনের কোটিপতি হওয়া ও আলাদিনের প্রদীপ পাওয়া’ এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।

সম্প্রতি ইয়াবা খাওয়ার একটি ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনার তুঙ্গে  আলাউদ্দিন।

এদিকে আলাউদ্দিনের ইয়াবা খাওয়ার বিষয়ে জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্য ময় থাকায় সাধারণ জনগণের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
লকডাউনের সুযোগে তিন গুন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে স্পিড বোট ঘাট থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ অবৈধ পথে লাখ লাখ টাকা আয়ে পাল্টে যায় আলাউদ্দিনের জীবন যাত্রা।

ঢাকায়, ভোলায় জমি ফ্লাট, বৈধ অবৈধ নানা ব্যবসা এখন আলোচনায়।

মঙ্গলবার আলাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মেদুয়া এলাকায় নদী ভাঙনের পর তার বাবা নিঃস্ব হয়ে খেয়াঘাটে আটার রুটি তৈরীর দোকান দেন এটি সত্য। ওই সময় তিনি ছোট ছিলেন। তিনি অনেক পরিশ্রম করে টাকা আয় করেন বলেও দাবি তার। তবে ১৯৯৭ সালে তিনি খেয়াঘাটের তেল ব্যবসায়ীর টেলিফোন কল সেন্টারে তিনি দৈনিক ২০ টাকা বেতনে কাজ করেন । এটাও স্বীকার করেন। করোনা পরিস্থিতি লকডাউনের সুযোগে ভোলা-বরিশাল রুটে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারেও যাত্রী প্রতি ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৫শ টাকা নেয়ার বিষয় তিনি স্বীকার করে বলেন, ওই টাকা ঘাট ম্যানেজারের কাছে জমা থাকতো। বোনের কাছ থেকে দুই শতাংশ জমি কিনে জেলা সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়য়নের ১ নং ওয়ার্ডে একটি ছোট ডেড়া ঘর তুলে ওই বাড়িতেই পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতেন আলাউদ্দিনের পিতা জয়নাল আবদীন ছিদ্দিক।

যাকে খেয়াঘাটের কুলিরা চিনতো রানীর বাপ হিসেবে। স্পিডবোট ব্যবসায় নামতেই ওই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে ৩৩ শতাং জমি কিনে একতলা পাকা ভবন করেন আলাউদ্দিন। পাশে বড় ভাই সালাউদ্দিনেরও পাকা বাড়ি হয় একই ব্যবসায় । ওই বাড়িতেও এখন আলাউদ্দিনের থাকা বে-মানান। তিনি জেলা শহরের পৌর ৪ নং ওয়ার্ডে ৫ তলা ফাউন্ডেশনে বাড়ি নির্মান শুরু করেন। যার দুই তলা নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। ওই নির্মানাধিন বাড়ির পাশেই তিনি বর্তমানে ভাড়া থাকেন। এ ছাড়া শহরের ওয়েস্টর্নপাড়া ডাক্তারবাড়ি এলাকায় ক্রয় করেছেন ১০ শতাংশ জমি। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকায় ভায়রা ভাইয়ের সঙ্গে নিজে ক্রয় করেন ৮ কাঠা জমি। আলাউদ্দিন অবশ্য জানান ওই স্থানে তিনি ৩ কাঠা জমি কিনেছেন বলে জানান। এ ছাড়া ভোলা –বরিশাল রুটের ভেদুরিয়া ঘাটে রয়েছে জ্বালানী তেলের ব্যবসা। ৮টি স্পিডবোটের মালিক। যার মূল্য রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। রয়েছে নাভানা ও ফ্রেস এলপি গ্যাস এজেন্সি, সিএনজি ডিলারশিপ, দুটি ট্রাকের মালিক, ঢাকা ও বরিশালে বাড়ি। সব মিলি আলাউদ্দিনের রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ।

সম্প্রতি স্পিডবোট ঘাটে মালিক ও চালকদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিলে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে অস্বীকার করেন বেশিরভাগ মালিক ও চালকরা।

মঙ্গলবার ওই ঘাটে গেলে আলাউদ্দিনের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট সমিতির সম্পাদক ইকরাম হোসেন ডালিম জানান, তাদের একটি সমিতি থাকলেও এটি ছিল, আলাউদ্দিনের একক আধিপত্য। আলাউদ্দিন প্রথমে খেয়াঘাট এলাকা থেকে নজরুল মিয়ার স্পিডবোর্ট চালাতেন। পরে বরিশালের এক মালিকের বোটের ইঞ্জিন বিক্রি করে দেয়র পর কিছু দিন গা ঢাকা দেন। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির ছত্রছায়ায় ২০০৩ সালে ভেদুরিয়া ঘাটে স্পিডবোট পারাপার ব্যবসা শুরু করেন।

এর পর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয় নি। ওই ঘাটে ৬০ জন মালিকের ১০৫টি স্পিডবোট রয়েছে। আলাউদ্দিনের নিজ নামে ৫টি ও ভাইর নামে তিন টি, ভগ্নিপতির নামে ২টি মালিক হলেও তিনি ৪০ নামের সিরিয়ালের টাকা হাতিয়ে নিতেন।

অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক বছর আলাউদ্দিন স্থানীয় এক নেতার নাম ভাঙিয়ে ওই এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করার পাশপাশি লাখ লাখ টাকা আয় করে নিতে থাকেন। গতকাল ওই ঘাটে উপস্থিত ৩৫ জন স্পিডবোট মালিক জানান, আলাউদ্দিন তাদের জমানো ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া তাদের অধিকার খর্ব করে নিজেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তারা আর ওই ঘাটে আলাউদ্দিনের নেতৃত্ব মানেন না।

ঘাটের লাইনম্যান মনজরুল ইসলাম মনজু জানান, আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনি বাদি হয়ে মামলার জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। প্রতিবন্ধী ( পা নেই) হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি ছোট বেলা থেকে ওই ঘাটে। ১২ বছর ধরে স্পিডবোট চালান। দুর্ঘটনায় তার একটি পা হারান। তিনি একটি স্পিডবোট ক্রয় করেন। বোটটি ওই ঘাট থেকে ছাড়তে দেয় নি আলাউদ্দিন। রুবেল ও বাবুল জানান, স্পডবোট দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে তা বুঝে দেন নি।

স্পিডবোট মালিক মোসলেউদ্দিন, নিজামউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, জানান আলাউদ্দিন ঘাটে রাম রাজত্ব করতেন। এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। এভাবেই তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া অন্যান্য বোট থেকে প্রতিদিন যে চাঁদা তোলা হতো তার একাংশ লাইনম্যানসহ তিন স্টাফের বেতন দেয়ার পর অবশিষ্ট টাকা হাতিয়ে নেন আলাউদ্দিন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ভেদুরিয়া ঘাটে তেলের ব্যবসার পাশপাশি মাদকের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েক দিন পর পর একটি মাইক্রোবাস ওই দোকানে আসে। কিসের যেন প্যাকেট তাতে তোলা হয়। এতদিন আলাউদ্দিনের দাপটে কেই এ সব বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পান নি।

এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ভোলার গোয়েন্দা সংস্থার ডিবি’র ওসি সহিদুল ইসলাম জানান, আলাউদ্দিনের বিষয়ে তারা তদন্ত করছেন। একই কথা জানান ভোলা থানার ওসি এনায়েত হোসেন। অপরদিকে আলাউদ্দিন তার ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জানান, এটি কাটপিস।

গতকাল ঘাটে শতাধিক স্পীড বোট মালিকেরা একত্রি হয়ে  আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান ভেদুরিয়া ঘাট স্পিডবোট মালিকরা।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।