ব্রেকিংঃ

কেমন প্রধানমন্ত্রী হবেন ইমরান খান?

অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে ক্রিকেটার ইমরানখানের দল তেহরিক ই ইনসাফ ১১৩ আসন পেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তার ধারে কাছেও নেই আর কোনো দল। সে হিসেবে আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ইমরান খান।

ইমরান খান ১৯৯২ সালে পাকিস্থান বিশ্বকাপ জিতেছিল। তিনি ছিলেন দলের নেতৃত্বে। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। নাম দেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইসলাম। সংক্ষেপে পিটিআই।

৬৫ বছরের আকর্ষণীয় এ ক্রিকেট অধিনায়কই আজ জননেতা হয়ে উঠেছেন। একসময়ের গ্ল্যামার ও ফ্যাশনেবল জীবন পরিত্যাগ করেছেন।

নির্বাচনের আগে প্রচারণা অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা গেছে ভিড়। মানুষ শুধু ইমরান খানকে দেখছেনই না, কথাও শুনছেন। ইমরান দুটো ব্যাপার সকলের মনে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। ‘এবারই সুযোগ পাকিস্তান বদলে ফেলার। বার বার এ সুযোগ আসবে না।’

প্রচারণায় নিজের বিশ্বকাপ খ্যাতিটাকে কাজে লাগিয়েছেন। যেখানে সভা করছেন সেখানেই তার দলের যুব সংগঠন ‘ব্র্যান্ড ইমরান’কে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপে খেলার সময় তার বোলিং অ্যাকশন ছাপা গোল কিংবা মোবাইল কভার আর চমৎকার ডিজাইনের ফ্ল্যাগ ছড়িয়ে দিয়েছেন।

নির্বাচনে লড়াইয়ে তিনি দুর্নীতি দূর হঠাও স্লোগান তুলেছেন। ১৯৯৬ সালে তৈরি হওয়া পিটিআই ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত একটি মাত্র আসন জিতেছিল। ৪ বছরের ব্যবধানে তিনি শতাধিক আসন জিতে ক্ষমতায়ও যাচ্ছেন।

এবারের সংসদ নির্বাচনে ইমরান খান সেনাসমর্থন পেয়েছেন এমনটি শোনা গেছে পূর্বেই। ৭১ বছরের স্বাধীন পাকিস্তানের ইতিহাসে অর্ধেক সময়ই শাসন করেছে সেনারা। সুতরাং নির্বাচনে তাদেরও প্রভাব এখনো স্বীকৃত দেশটিতে।

১৯৫২ সালে দেশের জন্মের ৫ বছর পর ইমরানের জন্ম। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন ইমরান খান। বেশিরভাগ সময় থেকেছেন লন্ডনে। সে কারণে তাকে ‘বিদেশি পাকিস্তানি’ও বলা হতো একসময়।

নারীসঙ্গ ইমরান খানের অন্যতম নেশা। যে কারণে অতীতে বিয়ে ও সংসার ক্যালেঙ্কারির নানা গল্প শোনা গেছে। ব্রিটিশ সুন্দরী জেমাইমা খান ছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু একসময় নিজের পরামর্শদাতা বুশরা মানেকা বিয়ে করেন। রেহান খান ছিলেন দ্বিতীয় পত্নি।

সম্প্রতি তার একটি বইতে ইমরান খানের অনেক কৃতকর্মের কথা ফাঁস হয়েছে। যদিও দেশটিতে এখন বইটি বিক্রি বন্ধ আছে। কিন্তু এটি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বইয়ে রেহান খান দাবি করেন, রাতে ইমরান ৬ গ্রাম করে কোকেন নিতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নাকি তার নারী ক্যালেঙ্কারির কাহিনী রয়েছে ।

তবে ক্রিকেট শাসনে তার নানা সুখ্যাতি আছে। তিনি ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেয়ে যা যা করেছিলেন তা এখনো আলোচ্য। দলনেতা হয়ে ইমরান প্রাক্তন অধিনায়ক মজিদ খানকে (আত্মীয়ও বটে) বাদ দিয়ে তরুণ প্রতিভাবানকে সুযোগ দিয়েছিলেন। দল আগে, ব্যক্তি নয়—এই মানসিকতা দেখিয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি থেকে সামান্য দূরে থাকা মিয়াঁদাদের কথা না ভেবে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিলেন। পাকিস্তান জয়ের স্বাদ পেয়েছিল।

১৯৯৯ সালে ইমরানকে দেশছাড়া করেছিলেন পারভেজ মোশারফ। ২০০২ সালে মোশারফ চাননি ইমরানের সঙ্গে হাত মেলাতে, তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে। তারপর ২০০৩ থেকে ২০১৮ – ইমরান শাসন দেখল খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চল।

তবে ইমরানের বিপক্ষে ইসলামপন্থীদের বেশ অভিযোগ রয়েছে। তিনি ক্ষমতায় এলে দেশে ইসলামের নাম গন্ধও থাকবে না বলে বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মাওলানা ফজলুর রহমান।

তিনি তেহরিক ই ইনসাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছেন, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আমাদের দলের তিন সদস্য নিহত হয়েছে তাদের চক্রান্তের কারণে। আমাদের অনেক অনেক তরুণ সদস্যকে গুম করেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ইমরান খানকে দেখে বড় একজন সমাজকর্মী হিসেবে৷ নিজের দেশে তিনি একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল পরিচালনা করেন৷ একজন ক্যারিশম্যাটিক চেহারার অসাধারণ সাবেক খেলোয়াড় হিসেবেও পশ্চিমা নারীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়৷ কিন্তু এখনো ইমরান একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ওয়াশিংটনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি৷

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের কাছে জার্মান মিডিয়া ডয়চে ভেলে জানতে চেয়েছিল, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে তারা তার সঙ্গে কাজ করতে চান কিনা৷ সরাসরি উত্তর না দিলেও, কূটনৈতিক জবাব ছিল ভিন্নরকম।

মার্কিন সরকার পাকিস্তানে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পক্ষে৷ সে দেশের নাগরিকেরা যাকে নির্বাচিত করবেন, আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে একই ধরনের এজেন্ডা নিয়ে তাঁর সাথেই কাজ করতে আমরা প্রস্তুত৷

ভুট্টো বা নওয়াজ শরিফের সাথে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করতে হয়, তা জানা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু ইমরান খানের ক্ষেত্রে তা নয়৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ও ভারতে জঙ্গি কার্যক্রম ঠেকাতে ইমরানকে ওয়াশিংটনের সঙ্গেই কাজ করতে হবে৷

তবে ইমরান একবার বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করতে আসা প্রতিটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করবেন৷

তার এমন কথায় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় ঢুকেছিল৷ জেনারেলরা ভাবছিলেন, ইমরান নির্বাচিত হলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপড়েন আরো জটিল পরিস্থিতিতে গড়াবে৷ কিন্তু কিছু সময় পাড় হলে ইমরানও নিজের বক্তব্যে রাশ টেনেছেন৷ পরবর্তীতে নিজেকে অনেক সংযত রেখে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান ডয়েচে ভেলের কাছে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চিন্তাটা খুব একটা সুখের নয়৷ কারণ, তিনি এবং তার দলের অবস্থান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঠিক উলটো৷

তবে ইতিহাস বলে, নির্বাচনের আগে যা গর্জে পড়ে তা বর্ষে না। অতীতে জুলফিকার আলী ভুট্টোও নির্বাচনের আগে মার্কিনবিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তিনিও নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার আগে রিচার্ড নিক্সনের সাথে দেখা করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে এসেছেন।

 

 

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।