ব্রেকিংঃ

পুলিশ অফিসার হয়ে আপরাধ দমনের স্বপ্ন স্বার্নালিয়ার

এম মইনুল এহসান ॥
ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্র প্রসাদ এলাকার ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী স্বার্নালিয়া (১৫)। দারিদ্রতার কারণে বাল্যবিয়ে দিতে চায় যার পরিবার। কিন্তুু তার স্বপ্ন পড়াশোনা করে পুলিশ অফিসার হয়ে দেশের অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখার। স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে স্থানীয় ভেলুমিয়া চন্দ্র প্রসাদ কো- অপরেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল সে।

সম্প্রতি স্কুল বন্ধ থাকায় সময় কয়েক দিনের জন্য চরফ্যাশনে বোনের বাড়ীতে বেড়াতে যায়। এর মধ্যে তার মা স্থানীয় মিষ্টির দোকানের এক কারিগরের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। কিন্তুু স্বর্নালিয়া চায় পড়াশোনা করতে। তাই তো পরিবারের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জানিয়ে বাড়ীর পাশে স্থানীয় লোকজন, কিশোরী ক্লাবের কিশোরীদের ও ১০৯৮ এর সহায়তায় নিজের বিয়ে বন্ধ করে নতুন জীবনের সূচনা করে।
স্বর্নালিয়া নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের বিয়ে বন্ধ করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সে রুখে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, সহপাঠীদের সঙ্গে আবার নতুন করে পড়ালেখাও শুরু করেছে।
কিশোরী স্বর্নালিয়া জানায়, আমি লেখাপড়া শিখতে চাই। অথচ আমার মা আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার জন্য খুব চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি আমি তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় মায়ের সাথে ও দুলাভাইয়ের সাথে ঝগড়া পর্যন্ত হয়েছে। আমার বয়স এখনও ১৮ হয়নি। অথচ আমার মা শাহিদা বেগম জোর করে একজন মিষ্টির দোকানের কারিগর এর সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার।

আমার স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে পুলিশের বড় অফিসার হয়ে সন্ত্রাস,মাদক,জঙ্গীবাদ সহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবো। সেই সাথে সমাজে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতন রোধে অসহায় নারীদের পাশে দাড়াবো।
স্বার্নালিয়া আরো জানায়, আমি কোস্ট ট্রাস্ট কিশোরী ক্লাব ‘শাপলা’ এর নিয়মিত সদস্য। সেখান থেকে আমি জানতে পেরেছি বাল্যবিবাহ এমন একটি সমস্যা যার করনে, একটি মেয়ের যেমন শারীরিক ঝুঁকি থাকে, তেমনি তার মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্থ হয়।
তাই আমি কিশোরী ক্লাবের সদস্য জান্নাত,পপি,নূপর,মিতু সহ সবাইকে আমার বিয়ের খবরটা জানাই। ওরা কোস্ট ট্রাস্ট এর ওয়ার্ড প্রমোটর ফাতেমা আপাকে জানালে তিনি আমার মাকে এসে বুঝান এবং বাল্য বিয়ের কুফল তুলে ধরেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান,মেম্বার সহ এলাকার গন্যমান্য সবাই আমার পরিবারকে বুঝায়। পরে আমার মা আমার বিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
স্বার্নালিয়ার মা শাহিদা বেগম জানায়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও চায় স্বার্নালিয়ার বিয়ে দিতে। তাই আমিও রাজি হয়ে গেছিলাম।এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন ওকে পড়াশোনা করিয়ে স্বার্নালিয়ার স্বপ্ন পূরনে সহযোগিতা করবো।
ভেলুমিয়া চন্দ্র প্রসাদ কো- অপরেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুয়েল ইসলাম বলেন, স্বার্নালিয়া নিজের বিয়ে বন্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সে অনেক মেধাবী ও ভদ্র।
সে নিজের বিয়ে নিজে বিয়ে বন্ধ করে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরাও তার পড়াশোনার করার জন্য সব ধরনের সহায়তা করবো। আমরা চাই এভাবেই স্বার্নালিয়া মতো দেশের সবাই সচেতন হোক।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল সালাম মাষ্টার জানায়, আমরা ১০৯৮ এর মাধ্যমে স্বার্নালিয়ার বিয়ের কথা শুনে তার বাড়ীতে মেম্বার,চৌকিদার পাঠিয়ে তার বাবা মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করি। আমরাও চাই ১৮ বছর আগে যেন কোন মেয়ের বিয়ে না হয়। তার জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সহায়তায় বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে কাজ করছি। আমরা চাই আমাদের ইউনিয়নটা যেন বাল্য বিয়ে মুক্ত ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।
কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মিজানুর রহমান জানায়, স্বার্নালিয়া আমাদের কিশোরী ক্লাব শাপলা এর নিয়মিত সদস্য। সে তার নিজের বিয়ে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের ক্লাবের জন্য নয় পুরো এলাকার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।স্বার্নালিয়ার মতো যদি সকল কিশোরী তাদের বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা জন্য এগিয়ে আসে তাহলে ভোলা জেলাকে এক সময় বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো।

এসময় তিনি আরো বলেন, ইউনিসেফ এর সহায়তায় কোস্ট ট্রাষ্ট এর আইইসিএম প্রকল্পের ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশনে প্রায় ৮০০ কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। এই ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশেরীরা বাল্য বিয়ে কুফল থেকে শুরু করে জীবন দক্ষতা সকল উপাদান জানতে পারে। এরাই সবাই মিলে যেখানে বাল্য বিয়ে সেখানেই পতিরোধ গড়ে তুলে।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।