ব্রেকিংঃ

ভোলার প্রতিকূলের মধ্যে দিয়ে কার্যক্রম চলছে ডালচর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের

 

আবদুল্লাহ নোমান ॥

‘ডালচর ইউনিয়ন’ভোলা শহর থেকে সর্বদক্ষিনে যার তিন পাশে মেঘনা নদী এবং এক পাশে বঙ্গোপসাগর অবস্থান। নদী ও সাগর বেষ্টিত এই ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। যাদের অধিকাংশ মৎসজবী ও কৃষি পেশার সাথে জড়িত। জলবায়ু পরিবতর্নে প্রভাবে যে ইউনিয়টিতে প্রতিনিয়ন নান ধরনের দুর্যোগ লেগেই থাকে।এখানে প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার শিশু রয়েছে যাদের বয়স আঠারো বছর এর নিচে। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে কিশোর-কিশোরী। নানা প্রতিকূলের মধ্যে দিয়ে ডালচরে যাদের নিয়ে ইউনিসেফ এর সহায়তায় কোস্ট ট্রাস্ট এই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ১৮ টি ক্লাবে কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনা করে থাকে যে খানে প্রায় ৫০০ মতো সদস্য রয়েছে।
সাগর বেষ্টিত এই ইউনিয়নের কিশোর-কিশোরীর দক্ষতা বিদ্ধিতে প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে এই ইউনিয়নের অভিভাবকরা অসচেতন হওয়য়া তাদের সন্তানদেরকে তারা কিশোর-কিশোরী ক্লাবে পাঠাতে চায় না। ফলে কিশোর- কিশোরীরা শিশু বিয়ে সহ জীবন দক্ষতা সম্পর্কে তারা তেমন কোন ধারনা পায় না। এর ফলে অনেক শিশুর স্কুলে যাভার পরিবর্তে বাড়তি লাভের আশায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে অল্প বয়সেই স্তায় শ্রম বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার যেসব কিশোর-কিশোরীরা ক্লাবে আসে তারাও পরতে হচ্ছে নানা সমস্যরা মধ্যে।
ডালচর ১নং ওয়ার্ডের ‘ময়নামতি’ কিশোরী ক্লাবের সদস্য-মালা,সাফিয়া,তহমিনা,নিজ্জু সহ আরো অনেকেই জানায়, ক্লাব পরিচালনার করতে গিয়ে আমরা এখনও নির্ধারিত স্থান ঠিক করতে পারিনি। আজ এই বাড়িতো কাল অন্য বাড়ি। আাবার বসার জন্য পর্যাপ্ত ম্যাঠ নেই। ফলে বাদ্ধ হয়ে বস্তা সেলাই করে বসতে হচ্ছে আমাদের । এছাড়াও পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী না থাকায় ক্লাবে এসে খেলতে পারেনা ক্লাবের সদস্যরা। রাস্তাঘাট না থাকায় ক্লাবে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হয় আমাদের। শুধু তাই নয় অভিভাবকার মনে করে এখন ক্লাবে গেলে কিশোর-কিশোরীরা নষ্ট হয়ে যাবে। ক্লাবে আসলে কোন লাভ নেই এমন ধারনা পোষন করে। ফলে অনেক মেধাবী কিশোর-কিশোরী ক্লাবে আসতে পারেনা। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরো বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করার কথা জানান।
৪নং ওয়ার্ডের ‘শাপলা’ কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য রুমা,রিপন,সোহাগসহ আরো অনেকেই জানায়, নদীর পাশে এই ওয়ার্ডের অবস্থান হওয়ায় প্রতিনিয়ত নদীতে ভেঙ্গে ছোট হয়ে আসছে। ফলে ক্লাবের অনেক সদস্যর বাড়ীঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই এখানে ক্লাবের কিশোর- কিশোরীরে আরো প্রশিক্ষন দরকার। এছাড়ার বর্ষা মৎসুমে এক রকম ক্লাব পরিচালনা করাই কষ্ট কর হয়ে পরে। তাই ঝুকিঁর মধ্যে দিয়ে আমাদের ক্লাব এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এসময় তারা দাবী করে বলেন- আমারা যেহেতু সাগর মোহনায় ঝুকিঁ নিয়ে ক্লাব চালাই। তাই আমাদের জবীন দক্ষতা প্রশিক্ষনের পাশাপাশি দুর্যোগকালীন মোকাবেলায় করনীয় সহ এর উপর প্রশিক্ষন দিলে ভালো হতো।এছাড়ার ক্লাবের সদস্যদের ঝুকিঁর কথা চিন্তা করে লাইফ জ্যাকেট,রেইন কোর্টও ছাতা দেওয়ায় দাবী জানায়। পাশাপাশি জীবন দক্ষতা বিষয়ক বই ক্লাবের প্রত্যোক সদস্যদের দেওয়ার দাবী জানায়।
ডালচর ইউনিয়নের কোস্ট ট্রাস্ট এর সম্মনয়কারী মো: গিয়াস উদ্দিন জানায়,ডালচর ইউনিয়টি মূল ভুগন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় প্রতি নিয়ত অনেক কষ্ট করে এখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষ কর্মীর সংকট, অভিভাবকরা অনেক বেশি অসচেতন। ফলে ক্লাবে তাদের বাচ্চাদের পাঠাতে চায় না। এর জন্য আমরা কোস্ট ট্রাস্ট এর মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছি। এখন সরকারি ভাবে ইকটু সহায়তা পেলে এই ধরনের কার্যক্রম আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান।
ডালচর ইউনিয়নের সিবিসিপিসি কমিটির সদস্য ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, দারিদ্র্যতার কারনে এখানকার অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে পড়াশোনা না করিয়ে নদীতে মাছ ধরতে কিংবা ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছে কাজের জন্য। ফলে ঝরে পড়া শিশুর হার তেমন কমছে না। তাই শিশু শ্রম নিরসনের জন্য কোস্ট ট্রাস্ট যে শিশু সুরক্ষা বৃত্তি দিচ্ছে তা উপকূলীয় এলাকা হিসাবে এখানে বৃত্তি বাড়িয়ে দেয়া উচিত। পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার দাবী জানান।
ডালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ইউনিসেফর এর মাধ্যমে কোস্ট ট্রাসট র্দীঘদিন ধরে আামার ইউনিয়নে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর ফলে আমার ইউনিয়নে এখন অনেকটাই বাল্য বিয়ে কমে আসছে। পাশাপাশি জন্ম-নিবন্ধনের হার আগের থেকে বেড়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকারা এখন তাদের সন্তানদের আগে থেকে অনেক বেশি যতœ নিচ্ছে। এখন ছেলে-মেয়েদের নদীতে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছে। যা অনেক ভালো দিক। এটা সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে এই কিশোর-কিশোরী ক্লাব কার্যক্রম পরিচালনার কারনে। আমি আমার স্থান থেকে যথা সম্ভব এই ক্লাবের কার্যক্রম বেগবান করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাবো। যাতে আমার ইউনিয়নকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।
কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান জানায়, আমরা ডালচর,কুকরী-মুকরী, নতুন করে যোগ হওয়া মনপুরা উপজেলার কিশোর-কিশোরীদের জীবন মান উন্নয়নে ও তাদের ঝরে পরার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করতে যাচ্ছি। আশাকরি নতুন করে পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন হলে ক্লাব গুলোকে আরো সক্রিয় করে গড়ে তুলতে পারবো।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।