ব্রেকিংঃ

মুকুট বিহীন বাদশা ৬৯ এর মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ

আলহাজ্ব মোঃ আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকঃ

বাংলাদেশের স্বায়ত্ব শাসনের দাবিতে জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে পরিকল্পিত মামলায় গ্রেপ্তার করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারা দেশে শুরু হয় গনআন্দোলন।গঠন করা হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ভোলার গৌরব তৎকালীন ডাকসুর ভিপি জনাব তোফায়েল আহমেদ সেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা প্রনয়নের প্রধান ছিলেন জনাব তোফায়েল আহমেদ। তারই নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি এবং ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা পূর্ব পাকিস্তানে। আন্দোলনের নেতৃত্বে আশায় জনাব তোফায়েল আহমেদ ভোলা বাসির জন্য গৌরব। দীর্ঘদিন যাবত জনাব তোফায়েল আহমেদ এর সাথে আমাদের দেখা সাক্ষৎ নেই। মনের টানে সেই দিন আমি আলহাজ্ব মোঃ আবু তাহের ও অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান ঢাকায় গেলাম  জনাব তোফায়েল আহমেদের সাথে দেখা করতে। আমরা ঢাকায় গিয়ে ফারুকুর রহমানের মেজ ভাই এর পুরান ঢাকার বাসায় উঠলাম। গোসল করে নাস্তা খেয়ে আমরা দুপুরের দিকে গেলাম ইকবাল হলে। ইকবাল হলের নিচ তলার পূর্ব দিকের একটি রুমে জনাব তোফায়েল আহমেদ তখন  অবস্থান করছেন। কিন্তু দেশী বিদেশী ৩/৪ শত সাংবাদিকদের ভীড় ঠেলে আমরা জনাব তোফায়েল আহমেদ এর সাথে দেখা করতে পারলাম না। প্রায় দুপুর ২ টার দিকে ব্যার্থ হয়ে মন খারাপ করে ফারুক সাহেব এর ভাইর বাসায় ফিরে এলাম। ফারুক সাহেবের ভাইকে আমাদের ইকবাল হলে যাওয়া এবং জনাব তোফায়েল আহমেদ কে দেখতে না পাড়ারা কাহিনী বর্ননা করলাম। তিনি বললেন আজকে পারেন নাই আগামিকাল হয়তোবা দেখা করতে পারবেন। পরের দিন একই সময় নাস্তা সেরে আবার দুই জনই ইকবাল হলের দিকে রওনা হলাম। ইকবাল হলে পৌছে ই দেখলাম আগের দিনের চেয়ে ও মারাক্তক অবস্থা। বিবিসি,ভয়েজ অব  আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশেরে এবং বাংলাদেশের বিবিন্ন পত্রিকার হাজার খানেক সাংবাদিক জনাক তোফায়েল আহমেদ এর বক্তব্যর জন্য অপেক্ষা করছেন। আমরা দুই জন এদিক দিক ঘুরাঘুরি করে তোন রকম ফাক করতে পারলাম না জনাব তোফায়েল আহমেদ এর সাথে দেখা করতে। বিকাল ৩ টায় অবদি অপেক্ষা করেও দেকা করতে না পেরে  ব্যার্থ মন নিয়ে আবার সেই বাসায় ফিরে এলাম। রাতে বিবিসি শুনলাম। বিবিসি থেকে প্রচার করা হয়েছে জনাব তোফায়েল আহমেদ ইস দ্যা ক্রাউনলেস কিং অব ইস্ট পাকিস্তান। হু ইস রোলিং দ্যা কান্ট্রি বিহাইন্ড দ্যা স্ক্রীন। এ খবরটা শুনে মন ভরে গেলো। আমাদের দুদিনের কস্টের কথা ভুলে গেলাম। রাতে আমাদের ভাল ঘুম হলো সকালে উঠে নাস্তা সেরে আমরা  নারায়নগঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। নারায়নগঞ্চ জুটমিল মালিক সমিতির ক্লাবের প্রধান নির্বাহী ছিলেন অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমানের বড় ভাই।  আমরা দুপুরে তার বাসায় উঠলাম। ভোলার খবর এবং আমাদের ব্যার্থতার ইতিহাসা তার বড় ভাইকে জানালাম। তিনি আমাদের রেখে ক্লাবে গেলেন। ক্লাব থেকে ফিরে এসে আমাদের সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহন করেন। আমরা ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠার পরোক্ষনেই ফারুক সাহেব এর বড় ভাই বললেন আজ নারায়নগঞ্চ চৌরাস্তার মোড় জনাব তোফায়েল আহমেদ এর গন সংবর্ধনা। আমি বললাম তারা তারি একটু চা দেন খেয়ে জনাব তোফায়েল আহমেদের মিটিংয়ে যাব।  আমরা যেতে যেতে প্রায় আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল। আমরা গিয়ে দেখি লক্ষাধিক মানুষের মাঝে,  একটি উম্মক্তো মঞ্চে জনাব তোফায়েল আহমেদ দাড়িয়ে আছেন। তাকে তখন চেনা যাচ্ছিলনা। মিটিংএ  সব আলোচনার পর্ব শেষ। তখন জনাব তোফায়েল আহমেদ কে মালা দেওয়ার পালা। তখন একশ টাকার উপরের কোন নোট ছিল না। ১শ টাকার নোটের মালা দিয়ে  জনাব তোফায়েল আহমেদ কে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সোনার নৌকা, সোনার বৈঠা দেওয়া হয়েছে শত শত।  আজ ও জনগনের চাপে আমরা জনাব তোফায়েল আহমেদ এর সাথে দেখা করতে ব্যার্থ হলাম। ব্যার্থ হয়ে বাড়ি বাসায় ফিরে আসি।  আমাদের মিশন ব্যার্থ হলে ও আনন্দে বুক ভরে গেছে বিবিসির প্রচারে মুকুট বিহীন বাদশা তোফায়েল আহমেদ এর নাম শুনে। তখন কেউ রেডিও পাকিস্তান শুনতো না এবং  বেসরকারি কোন রেডি টেলিভিশন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন থেকে ৬৯ এর গনআন্দোলনের এবং মুক্তিযোদ্ধের নয় মাস বিবিসির একটি পজেটিভ রোল প্লে করেছে। তখন সবাই বিবিসির সাংবাদিকদের জন্য উম্মুখ হয়ে বসে থাকতেন। বিবিসি সকল আন্দোলনের সঠিক সংবাদ দিয়ে বাঙালী জনগনকে মুক্তিযিদ্ধে উদ্ভধ করেছেন। এ ইতিহাস সবার ই জানা আছে।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।