ব্রেকিংঃ

রাজধানীতে ক্ষোভের আগুন শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষা করল চালকদের লাইসেন্স

বিমানবন্দর সড়কে গত রবিবার বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো নৌ মন্ত্রীর পদত্যাগ, ঘাতক বাস চালকের ফাঁসি, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীরা উত্তরা হাউস বিল্ডিং মোড় ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ৩টি বাস জ্বালিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে তারা শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং মোড়, রামপুরা টিভি ব্রিজ, আগারগাঁও মোড়, মিরপুর-১৪ নম্বর ও কাকরাইল এলাকায় সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে পরিবহন বাসগুলোতে তল্লাশি চালায়। শিক্ষার্থীরা চালকের লাইসেন্স আছে কি না জানতে চায়। চালক লাইসেন্স দেখাতে পারলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। লাইসেন্স দেখাতে না পারলে শিক্ষার্থীরা ওই গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এভাবে গোটা রাজধানী জুড়ে শিক্ষার্থীরা বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালনার অভিযোগে অন্তত ২০ টি বাস ভাংচুর করে। বিকালের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করে। আমরা তাদেরকে সরিয়ে রাস্তার এক পাশে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।’ এ অবস্থায় দুপুর ১টা পর্যন্ত এই এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবরোধ করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এসময় ৭-৮টি বাস ভাংচুর করে।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় : বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক অবরোধ করে। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ ও বিসিআইসি কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। অবরোধের ফলে মিরপুর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ সড়কে যানবাহন চলাচলের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় রাস্তায় আটকে থাকা প্রায় ২০/২৫ টি গাড়ি ভাংচুর করে। শিক্ষার্থীরা হিমাচল পরিবহনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলে।

উত্তরা হাউস বিল্ডিং মোড় : দুপুর ২টার দিকে উত্তরা বিমানবন্দর সড়কে হাউস বিল্ডিং মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর বেপরোয়াভাবে হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা লাঠি দিয়ে বিভিন্ন বাসের উইন্ডশিল্ড (সামনের কাচ) ও জানালার কাচ ভাংচুর করতে থাকে। সেখানে বিজিএমইএ ফ্যাশন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন কলেজ, রাজউক মডেল কলেজ ও উত্তরা হাইস্কুলের শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়। এক পর্যায়ে এ হামলা আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে জসিম উদ্দীন মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় অর্ধশত বাস ভাংচুর করে। এসময় সব ধরনের যানবাহন চলাচাল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ হাউস বিল্ডিং মোড়ে শিক্ষার্থীদের সরাতে লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে এর জবাব দিতে থাকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে বুশরা পরিবহন ও এনা পরিবহনের দু’টি বাস আটক করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে বাস দু’টিতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে উত্তরা ফায়ার স্টেশন থেকে অগ্নিনির্বাপনকারী একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে পুলিশ জল কামান দিয়ে গরম পানি নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা সরে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা এলাকায় শিক্ষার্থীদের আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ উত্তরা এলাকা থেকে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। যদিও উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন বলেছেন, কোন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি।

মতিঝিল-রামপুরা-মিরপুর : মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে সকাল ১১টায়। তারা কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি শেষে তারা চলে যায়। অপরদিকে, রামপুরা টিভি ব্রিজের ওপর সড়কে দুপুর ১টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবরোধ শুরু করে।

অপরদিকে, সকাল থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্করে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ, হারম্যান মেইনার কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মিরপুর আদর্শ স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে। এর আগে মিরপুর-১৪ নম্বরে হারম্যান মেইনার কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়ে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।