ব্রেকিংঃ

‘বর্তমানে ইসলামিক স্কুল নির্মাণ মসজিদ নির্মাণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ’

নর্থ ক্যারোলাইনা  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য। শার্লট  নর্থ ক্যারোলাইনার প্রসিদ্ধ একটি শহর। এ শহরে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ইসলামিক একাডেমি।

প্রতিষ্ঠানটিকে যিনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। যিনি ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ শহরটিতে সে শিক্ষাগুরুর নাম ড.আজিম বেগ।যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ ইসলামিক সাইট মুসলিম আমেরিকান-এ সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছিলো। সেখানে তিনি ইসলামিক স্কুলের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছে আবদুল্লাহ তামিম।আপনার জীবন ও আপনার শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন?আমি শার্লট ইসলামিক একাডেমির অধ্যক্ষ মির্জা আজিম বেগ। আমি শিক্ষা ক্ষেত্রে ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠান প্র্রতিষ্ঠা করি।আমি ১ জুন ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৭ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৬৪ সালে B.Ed সম্পন্ন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির প্রথম স্থান অর্জন করি মাত্র ২১ বছর বয়সে।১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। এমএ সমাপ্ত করে ১৯৭৩ সালে মিশিগানের একটি শীর্ষস্থানীয় ক্যাথলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি।

ক্যাথলিক স্কুলে সফল কর্মজীবনের ২৭ বছর পরে, হুদা স্কুল ও মন্টেসরি আমাকে তাদের প্রিন্সিপাল হতে আমন্ত্রণ জানায়। ২০০৪ সালে শার্লটে যাওয়ার আগে চার বছর আমি এখানে শিক্ষকতা করেছিলাম।২০১১ সালে শার্লট ম্যাকলেনবুর্গ স্কুল থেকে অবসরের পর আমি শার্লট ইসলামিক একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলাম গণিতের শিক্ষক হিসেবে। আগস্ট ২০১৬ আমি এ স্কুলেরই প্রিন্সিপাল হই।

তিনটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াও আমি উত্তর ক্যারোলিনার একটি স্কুলে কিছুদিন প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেছিলাম।

আমি বিশ্বাস করি, পাবলিক ও প্রাইভেট স্কুল (ক্যাথলিক ও ইসলামিকসহ) উভয়েই কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি আমি।

আমার জীবনে আমি একজন শিক্ষক, একজন প্রিন্সিপাল, একজন বোর্ড সদস্য ও একজন পিতা আর একজন আদর্শ ইসলামি ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জীবনকে দেখেছি। সবশেষে নিজের সব অভিজ্ঞতা দিয়ে শার্লট ইসলামি একাডেমিকে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় পেয়েছি।আপনার শার্লট ইসলামিক একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কখন?শার্লট ইসলামিক একাডেমি ১৯৯৮ সালে আল হুদা ইসলামি স্কুল নামে ইসলামি সেন্টার অফ শার্লট (আইসিসি) এর মালিকানাধীন বিল্ডিংয়ের কে-৬ এ সর্বপ্রথম ছোট একটি স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।স্কুলটি বেশ কয়েকটি উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। অবশেষে ২০০৭ সালে কে-২২ এভিনিউতে এমএএস বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করে শার্লট ইসলামিক একাডেমিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলি।অনিশ্চিত অবস্থায় কারণে, ২০১৫ সালের জুন মাসে স্কুল হেরিসবার্গের হিকোরি রিজ রোডের বর্তমান স্থানটিতে স্থানান্তরিত হয়। আজ এখনো পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ এ জায়গাতেই রয়েছি।

আমাদের আওতাধীন বর্তমানে আরো ১২টি ইসলামিক স্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা আমাদের ইসলামি স্কুলগুলোকে আরো অত্যাধুনিকিকরণে অ্যাডভান্সড এড্রেসিটির সুবিধা চালু করি।অ্যাডভান্সড এড্রেসিটির সুবিধা কী?প্রাতিষ্ঠানিক ও টেকসই উন্নতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক  টোকলকেই অ্যাডভান্সড এড্রেসিটির সুবিধা বলা হয়।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নে ও টেকসই এর জন্য স্কুলের সার্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হয় এর মাধ্যমে।

স্বীকৃতির মানদণ্ড শিক্ষাদান ও শেখানো এগুলোসহ নেতৃত্বের ক্ষমতা, সম্পদ ব্যবহারের যথাযথ প্রদ্ধতি ও জীবন পরিচালনায় আমাদের করণীয় একযোগে উন্নতির জন্য গাইডলাইন করার একটি  প্রক্রিয়াও বাস্তাবায়নের চেষ্টা ছিলো অনেক বেশি।

আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের জীবনে পড়াশোনার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নৈতিকতা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তব জীবনে অর্থনৈতিক অবকাঠামো ঠিক করতে সব ধরনের সহযোগিতায় আমরাই এগিয়ে ছিলাম।আমাদের সমাজে পাবলিক স্কুল থাকা সত্বেও ইসলামিক স্কুল প্রয়োজন হয় কেনো?আমার মতে বর্তমান সময়ে ইসলামি স্কুল নির্মাণ মসজিদ নির্মাণের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি মসজিদ ইবাদতের স্থান হিসেবে কাজ করে। আর দীনের মৌলিক জ্ঞান শেখানোর জন্য একটি ইসলামিক স্কুল খুবই দরকার।

একটি সমাজকে দীনের শিক্ষা দিতে ইসলামিক স্কুলের বিকল্প কিছু নেই। অনেক পরিবারের মানুষকে পূর্ণসময়ের ইসলামিক স্কুল একটি পরিবেশ প্রদান করে যেখানে শিশুরা ইসলামিক  সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে।ইসলামিক স্কুলে পড়ুয়া একটি শিশু বা সন্তান তার ব্যবহার আচার আচরণে সাধারণ শিশু বা সন্তান থেকে অনেক আলাদা হয়। তারা একটি দীনি পরিবেশে বেড়ে ওঠায় দীনের প্রতিটি প্রদক্ষেপে পারদর্শি হয়ে ওঠে।আপনার স্কুলের শিক্ষকদের কোন ধরনের যোগ্যতা আছে?বর্তমানে শার্লট ইসলামিক একাডেমিতে প্রি কেডেট থেকে ১২ তম শ্রেণি রয়েছে। ১৫২ জন শিক্ষার্থীকে ২০ জন যোগ্য শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশিকায় পরিচালিত হচ্ছে।শিক্ষকদের কমপক্ষে বি.এ. বা বিএস ডিগ্রী রয়েছে। কয়েকজন মাস্টার্স ও দুইজন পিএইচডি করা শিক্ষক রয়েছে।

আপনি বলেছিলেন আপনার ১৫২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কি অমুসলিম আছে?না বর্তমানে আমাদের কোনো অ-মুসলমান ছাত্র বা শিক্ষক নেই, তবে আমাদের স্কুল ইসলামিক স্কুল হলেও যে কোনো ধর্মের শিক্ষার্থীকে আমরা স্বাগত জানাই।আমাদের শিক্ষকরা তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। অতীতে, আমরা কিছু নন মুসলিম শিক্ষককে কুরআন প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়েছিলাম। তারা এ বিষয়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছিলো বলেই আমরা তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে রেখিছিলাম।আপনাদের স্কুল কি কোনো মাসজিদের আওতায় পরিচালিত হয়?

মৌলিকভাবে, কোনো মসজিদের আওতায় পরিচালিত হয় না। তবে স্কুল সকল মুসলিম ও আশপাশের মুসল্লিদের দ্বারা সমর্থিত।আমাদের আর্থিক সহায়তার অধিকাংশই শার্লট ইসলামি কেন্দ্র থেকে আসে। আইসিসি থেকেও সবসময় সমর্থন ও সহযোগিতা থাকে।আপনি যেভাবে আগাচ্ছেন আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য আমাদের কাছে একটু স্পষ্ট করবেন?আমরা চাই শার্লট ইসলামিক একাডেমির নিজস্ব ভবন ও পর্যাপ্ত আর্থিক ব্যবস্থা। যাতে আমরা চলমান শতাব্দীর প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার উন্নতি করতে পারি।

আমরা এমন এমন প্রোগ্রাম স্থাপন করার চিন্তা করি যার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা দেয়া সহজ হয়। আমাদের বর্তমানে উন্নত মানের সুসজ্জিত STEM ল্যাব, একটি মিডিয়া সেন্টার ও একটি জিমন্যাশিয়াম হলে স্বার্বিকভাবে পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠবে স্কুল। আমি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আস্তে আস্তে সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।