ব্রেকিংঃ

সেলাই করার অর্থ দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে মিনারা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনায় জেগে উঠা একটি ইউপি ঢালচর। এই ইউপির মানুষ সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। ১২ হাজার লোকসংখ্যার এই ইউপির অধিকাংশ মানুষই মৎসজীবী ও কৃষিজীবী পেশার জড়িত। যার একটা বড় অংশ শিশু।

ইউপির অধিকাংশ শিশুরা পরিবারের দারিদ্র্যতার কারণে অল্প বয়সেই স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ঝড়ে পড়ছে। তবে তাদের থেকে ব্যতিক্রম বাকপ্রতিবন্ধী মিনারা বেগম (১৪)। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকাতেই দারিদ্র্যতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে মিনারা। বর্তমানে পশ্চিম ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

দিন মুজুর বাবা হোসেন মিয়া ও মা খাদিজা বেগম এর একমাত্র মেয়ে মিনারা। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই যাদের সংসার চলে। একমাত্র মেয়ে মিনারা বেগম ছোট বেলা থেকেই বলা যায় সামান্য বাকপ্রতিবন্ধী। মা খাদিজা বেগমের ইচ্ছায় মূলত মিনারাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় বাবা হোসেন মিয়া। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাঝ পথে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তুু পড়াশোনা যে করতে চায় মিনারা। দারিদ্র্যতার কাছে যে হার মানতে চায় না ।

মিনারা ছিল কোস্ট ট্রাস্ট (আইসিএম) প্রকল্পে “ময়না” কিশোরী ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য। হঠাৎ তার ক্লাবে আসাও বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে (আইসিএম) প্রকল্পে ইউসি গিয়াস উদ্দিন তার বাড়িতে যায়। পড়ে তারা অসচ্ছলতার ও পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ দেখে ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় ও কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’র ১৫ হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। বর্তমানে সেই টাকা দিয়ে মিনারা সেলাই মেশিন কিনে। সেলাই করার অর্থ দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে। সেলাই মেশিনের চাকায় স্বপ্ন ঘুরতে শুরু করেছে মিনারার।

মিনারার মা খাদিজা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। ও বাকপ্রতিবন্ধী। তার পরেও ওর পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ঠ আগ্রহ রয়েছে। এখন কোস্ট ট্রাস্ট ওর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই কোস্ট ট্রাস্ট ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ।

কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের ইউসি গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা ঢালচর ইউপির দারিদ্র্যতা, বাল্য বিয়ের ঝুকিঁতে থাকা, অসহায় এতিম, প্রতিবন্ধী এমন ১১ জন শিশুকে আমাদের প্রকল্প থেকে ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’র সহায়তা পেতে সহযোগিতা করছি। এই সহায়তা পেয়ে সবাই এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে। পারিবারিকভাবে এই পরিবারগুলো আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছে। ফলে ইউপি ঝড়ে পড়ার হার কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারছি।

পশ্চিম ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, আমরা মিনারার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে আমার স্কুলে কোন ফি নেইনা। প্রয়োজনে আমরা ওকে বিভিন্নভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

ঢালচর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, মিনার বাবা একজন দিন মুজুর। সেই পরিবারে মেয়ে মিনারার পড়াশোনার যে এতো আগ্রহ তাতে আমি অভিভূত। তাই ওর কথা চিন্তা করে আমরা সরকারিভাবে সহয়াতা হিসাবে ভিজিএফ এর সুবিধা দিচ্ছি ওদের পরিবারকে। যাতে ওর পড়াশোনা বন্ধ না হয়। মিনারার মতো যেসব পরিবার আছে আমরা ইউপি থেকে সবার পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মিজানুর রহমান জানান, আমরা মিনারাদের মতো অসহায় দারিদ্র্য, এতিম, শিশু বিবাহের ঝুকিঁতে আছে প্রতিবন্ধী এমন ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশনের ৪০৮ জন ও পরে প্রতিবন্ধী ১০৮ জনসহ ৫০৮ জন কিশোরীর মাঝে এক কালীন ১৫ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করেছি। এই টাকা পেয়ে স্ব-স্ব কিশোরী এখন স্বাবলম্বী। তারা তাদের নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচও চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকাংশেই শিশু বিবাহ কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্বচ্ছলতাও হয়েছে অনেকের পরিবারের।

ভোলা ডিসি মো. মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ইউনিসেফ এর সহায়তায় কোস্ট ট্রাস্ট ভোলায় পিছিয়ে পড়া ও ঝরে পড়া রোধে যে শিশু সুরক্ষা বৃত্তির প্রদান এর মতো একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে অনেক শিশুরা যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমন তাদের পরিবার। আমি আশাকরি সরকারের পাশাপাশি তাদের এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। ফলে ঝড়ে পড়া শিশুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে বলে তিনি মনে করেন।

দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।